-->
শিরোনাম

ড্রাগন ফল বড় করতে রাসায়নিক প্রয়োগ, স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

অজয় ঘোষ, রাজশাহী
ড্রাগন ফল বড় করতে রাসায়নিক প্রয়োগ, স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

বছর দশেক আগেও বিদেশি ড্রাগন ফল সম্পর্কে দেশের মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। সুপারশপে মাঝে মধ্যে মিলতো ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের বেশ দামি ফলটি। ২০১০ সালের দিকে ব্যক্তি উদ্যোগে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কিছু চারা এনে বাংলাদেশে এই ফলের চাষ শুরু হয়। গত ১৫ বছরে দেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৫ গুণ।

 

প্রথমদিকে ফলের আকার ছোট দেখা গেলেও এখন একেকটির ওজন মাপলে দেখা যায় ৭০০-৮০০ গ্রাম। এমনকি ১ কেজির ওপর ওজনেরও এই ফলটি দেখা যাচ্ছে। সুপারশপ থেকে শুরু করে ছোট-বড় বাজার, গলির মুখের ফলের দোকান এমনকি ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের কাছেও মিলছে ড্রাগন ফল। নেই তেমন স্বাদও। বর্তমানে ফলের বাজারে এই ফল বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩৫০ টাকায়।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, অসাধু ড্রাগন চাষিরা ফুলে ‘ড্রাগন টনিক’ নামের একটি রাসায়নিক স্প্রে করে থাকে। এ কারণে ফল বেশ বড় হয় এবং ফলটি গাছে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। রাসায়নিক স্প্রে করা ফলের আকার বড় হলেও ফলের একপাশে লাল হলেও আরেক পাশে থাকে সবুজ। আর জৈব সার দিয়ে পরিচর্যা করা বিষমুক্ত ড্রাগন ফল তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। বাজারে দামও পাওয়া যায় খুব কম। একজন ড্রাগন চাষি জানায়, ‘ড্রাগন টনিক’ ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

 

প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ডা. ডানস ‘ড্রাগন টনিক’, প্লান্ট হরমোন, স্প্রে অনলি ফ্রুট, ৫০ মিলি/ লিটার, ১৫-১৮ দিন ফুলফোটার পর। প্যাকেটের গায়ে কোনো উপাদান লেখা নেই। এছাড়াও শীতের সময় গাছ থেকে ফল পাওয়ার জন্য প্রতিটি গছের ওপর বৈদ্যুতিক বাতি ব্যাবহার করছে রাত্রী বেলায়।

 

বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহারের বিষয়ে ড্রাগন চাষিদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, শীতের সময় ড্রাগন গাছকে গরম রাখার জন্য বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করে থাকি। এতে করে অসময়ে ফল পাওয়া যায়। যা অন্য সময়ের তুলনায় ফল কম হলেও দাম ভাল পাওয়া যায়।

 

সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ৬ থেকে ৭ বার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। ২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রামের খুলশী কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হরুনুর রশিদের নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গোলাম আজম ও এসএম কামরুল হাসান চৌধুরীর সমন্বয়ে একদল গবেষক ৪ বছর চেষ্টার পর শীতকালে গ্রীষ্মকালীন ফলটি ফলাতে সক্ষম হন।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে সাধারণত বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২, বারি ড্রাগন-১, পিংক ড্রাগন, ভেলভেট ড্রাগন ও ইয়োলো ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গোলাপি ড্রাগন ও বাউ ড্রাগন-২।

 

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৯৫ হেক্টোর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস আরো জানায় দিন দিন ড্রাগন ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে এ অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকরা।

 

গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজিপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি শফিউল ইসলাম মুক্তা জানান, এসব এলাকার কতিপয় কৃষক বেশি লাভের আশায় বাগানে ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি তার ড্রাগন গাছে রাসায়নিক স্প্রে করেননি। এতে তার অন্যদের তুলনায় ফলন কম হয়েছে।

 

কৃষিবিদদের মতে ‘২০১১-১২ সালে বাংলাদেশের উপযোগী করে ড্রাগন চাষের বিজ্ঞানসম্মত উপায় নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। তখনও এতো বড় ড্রাগন দেখা যায়নি। এমনকি থাইল্যান্ড কিংবা চীন থেকে যে ড্রাগন আসে, সেগুলোও এতো বড় নয়’। অনুমোদনহীন এ ‘ড্রাগন টনিক’ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ড্রাগন টনিক ব্যবহার মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যারা বাজার থেকে একটু কম দামে ড্রাগন কিনছেন, তাদেরকে সাবধান হতে বলেছেন কৃষিবিদরা।

 

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, আমাদের না জানিয়ে এ ‘ড্রাগন টনিক’ ব্যাবহার করছে। কাউকে ‘ড্রাগন টনিক’ ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়নি। তিন মাস পর পর জৈব সার, পটাস ও মুরগির বৃষ্ঠা ব্যবহার করলে ফলের সাইজ বড় হয়। এগুলোই ব্যবহার করার জন্য ড্রাগন চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ড্রাগন বাগানগুলোতে গিয়েছি। কোনো ড্রাগন চাষি এ ‘ড্রাগন টনিক’-এর ব্যাপারে কিছুই বলছে না। চাষিরা বলছে তারা টনিক ব্যবহার করছেন না। স্বাস্থ্যের জন্য কতটুক ক্ষতিকর প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এটা ঢাকায় পাঠিয়ে টেষ্ট করার পর বলতে পারব। তবে ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version