-->
শিরোনাম

উৎপাদন খরচ ৩৭৭- বিক্রি ১৭৫ বাড়ছে লোকসানের পরিমাণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
উৎপাদন খরচ ৩৭৭- বিক্রি ১৭৫ বাড়ছে লোকসানের পরিমাণ
শাহজীবাজার রাবার বাগান

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রাবার বাগানে প্রতি কেজি রাবারের উৎপাদন খরচ ৩৭৭ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আর গত ১০ বছরে ৫৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

 

এ ছাড়া বাগানের নিরাপত্তাসহ শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধারও অভাব রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, লোকবল ও রাবার সংগ্রহের উপকরণের অভাব, অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে রাবার সংগ্রহসহ মেয়াদোত্তীর্ণ গাছের কারণে এমন অবস্থা বলে অভিযোগ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ বন উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) অধীনে ২ হাজার ১০৪ একর জায়গা নিয়ে আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজীবাজার রাবার বাগান। একসময় বাগানটি লাভজনক থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে লোকসানের দিকে চলে যায়।

 

মূলত একটি রাবার গাছের আয়ুষ্কাল (রাবারের কষ দেয়ার ক্ষমতা) থাকে ৩০-৩৫ বছর। সে হিসাবে এক যুগ আগে গাছের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রাবারের দাম কমে যাওয়া ও সঠিক পরিচর্চার অভাবে এমন দুরবস্থা হয়েছে। দুরবস্থা দূর করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরই এখন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

 

বাগানের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে লোকসান শুরু হয় বাগানের। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে লোকসানের পরিমাণ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ কোটি ৭০ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ কোটি ২৬ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮৮ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ কোটি ৭৪ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ কোটি ৭১ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ বছরে ৫৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। এ বছর লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

 

সম্প্রতি সরেজমিন বাগানে দেখা যায়, রাবারের কষ সংগ্রহ করছে শ্রমিকরা। প্রতিজন শ্রমিকের ৩০০টি গাছ টিপিং করার কথা। সেখানে অধিকাংশ গাছেই টিপিং করা নেই।

 

নেই কষ জমা হওয়ার বাটি এবং ঝুলিয়ে রাখার তার। বাটি ও তারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল ও পলিথিন সুতা। কিছু বাটি রাখা হয়েছে মাটিতে। রাবারের কষ মাটিতে বেয়ে বেয়ে পড়ছে।

 

কথা হয় জমসেদ মিয়া নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে তিনি জানান, অফিস থেকে বাটি ও তারের সরবরাহ নেই। তাই বাধ্য হয়ে বোতল ও পলিথিন ব্যবহার করছেন। বাগানে কিছু ডেইলি লেবার আছে তাদের টিপিং করার প্রশিক্ষণ নেই। তারা টিপিং করার সময় ছাল কাটতে গিয়ে মূল গাছের কাঠের অংশে আঘাত করে। আর যে যে অংশে আঘাত লাগে সে অংশে গোটা হয়ে রাবার সংগ্রহের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

 

তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের কষ সংগ্রহের ওপর টাকা দেয়া হয়। শীত মৌসুমে প্রতি কেজিতে ৯ টাকা, আর অন্য মৌসুমে দেয়া হয় ১৫ টাকা। প্রায় প্রতিদিনই সংগ্রহকৃত রাবারের কষের সঙ্গে পানি মিশিয়ে শ্রমিকরা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

 

আব্দুল কুদ্দুস নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘বাগানের ভেতরে আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে সকাল সকাল কাজ শুরু করা যেত। বাগানের আরও উন্নতি হতো। এ ছাড়া এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একদম নেই। কোনো মেডিকেল টিমও নেই। জঙ্গলের ভেতরে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় সাপ-বিচ্চুর কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পোকা-মাকড় কামড়ালেও সঠিক কোনো চিকিৎসা পাই না।

 

বাগানের শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. আল আমীন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা ও নিরাপত্তা জোরদারসহ সকল সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পুরনো গাছ কেটে নতুন বাগান করতে হবে।

 

জানতে চাইলে বাগানের ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) নন্দী গোপাল রায় বলেন, ‘১২-১৩ বছর আগেই বাগানের প্রায় ৯৫ শতাংশ গাছের জীবনচক্র শেষ হয়ে গেছে। রয়েছে লোকবলেরও অভাব। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেড়েছে দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক বাজারে রাবারের বর্তমান দাম কম।

 

২০০০ সালে প্রতি কেজি রাবারের দাম ছিল সাড়ে ৩০০ টাকা। বর্তমানে ১৭৫-১৯৪ টাকা। গত সেপ্টম্বর মাসের হিসাব অনুসারে এক কেজি রাবার উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৭৭ টাকা। বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ১৭৫ টাকা। বাগানটির পুনর্বাসনে নতুনভাবে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’

 

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিএফআইডিসির রাবার বিভাগের সিলেট জোনের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) শোভন কান্তি সাহার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেই কেটে দেন। পরে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version