ভূমিকম্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের দেয়ালে ভয়ংকর ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভূ-কম্পটি অনুভূত হয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৫।
ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থেকে আট কিলোমিটার উত্তরপূর্ব এলাকায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দুইটি ও মেয়েদের একটি হলে ফাটলের দেখা দিয়েছে। এছাড়া, মেয়েদের শেখ হাসিনা হলের রিডিং রুমেও হালকা ফাটলের দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার দক্ষিন পাশের ব্লকের ৫০৪ নম্বর কক্ষের সামনের করিডোরের মেঝের দুটি টাইলস উঠে গেছে। একই তলায় নতুন ও পুরাতন ব্লকের সংযোগস্থলের করিডোরে ফাটল দেখা গেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ২০৪ ও ২০৫ নং কক্ষের মাঝের সংযোগস্থলে পুরো পাঁচতলাব্যাপী ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া ২০৯ নং কক্ষেও ফাটল দেখা যায়।
এছাড়া নজরুল হলের দোতালার ২০৭ নম্বর কক্ষের দেয়ালে, টিভি রুমের সামনের পিলারের সংযোগস্থলে নতুন ফাটল দেখা গেছে। ফয়জুন্নেছা হলের পাঁচতলার ৫১১ নম্বর কক্ষে, ৫০৩ নম্বর কক্ষের ফাটল এবং চারতলার ৪০৩ নম্বর সামনের করিডোরে ফাটল দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৫১৯ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমরা নিচে নামতে পারিনি। কম্পন থামলে দক্ষিণ ব্লকে পাশাপাশি দুটি টাইলস উপরের দিকে হালকা উঠে থাকতে দেখা যায়।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এহসান জানান, ‘প্রথমে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। ঝাঁকুনির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা সবাই দৌড়ে বাইরে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখি দেওয়ালে ছোটবড় কিছু ফাটল তৈরি হয়েছে।'
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া চৌধুরী আনিকা বলেন, 'প্রথমে ছোটোখাটো কম্পন ভেবে রুমের দিকে আসছিলাম সবাইকে বলতে যে, এতো নড়তেছে কেনো। আজকে গাড়ি যাওয়াতে ফয়জুন্নেসার পাশ দিয়ে প্রতিনিয়ত কন্সট্রাকশন এর কাজের জন্য বড় বড় মালবাহী গাড়ি যাওয়াতে হালকা কেঁপে উঠে। কিন্তু গোসলখানা থেকে রুমে আসার পথে দেখি ছাদ আর আমার রুমের পাশের জয়েন্ট আলাদা হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে বাকি নেই ভূমিকম্প।'
হল প্রভোস্টদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
যোগাযোগের পর বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সরেজমিনে ফাটলগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে কথা বলবেন বিষয়টি দেখার জন্য।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আবদুল লতিফ বলেন, আমি বিষয়টা জানতাম না, আপনার থেকে শুনেছি। যদি স্ট্রাকচারাল কোনো সমস্যা হয় তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। যদি সত্যিই ভূমিকম্পের কারণে স্ট্রাকচারাল কোনো সমস্যা হয়, তবে তা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিষয়ে আমরা নিজেরা খোঁজ নিয়ে এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য