মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। সাতক্ষীরা উপকূলে ‘মিধিলির’ তেমন প্রভাব না পড়লেও ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা।
তখন অনেক কৃষকের আধা পাকা ধান ‘মিধিলির’ ঝড়ো বাতাসে নুইয়ে পড়ে ক্ষেতে। ‘মিধিলির’ রেশ কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে ‘মিগজাউম’ নামের আরেকটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় ফসলের মাঠে থাকা পাকা আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের মানুষ।
পূর্বাভাস অনুসারে, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমে পরিণত হয়েছে। ফলে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে সব সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, শ্যামনগর উপকূলে লবণাক্ততার কারণে শুধু আমন মৌসুমেই ধান হয়। এখন বিলের পর বিল পাকা ধানে ভরা। কিছু কিছু ধান কেটে ঘরে তুলেছেন অনেকে। তবে বেশির ভাগই এখনও মাঠেই রয়েছে। অনেকে কাটার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিক সংকটে সে চেষ্টাও খুব সামান্য। এই সময়ে ঝড়-বৃষ্টি হলে এসব ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের সাপখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমনের ফলন ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় কৃষকদের মনে শঙ্কা তৈরি করেছে। সবাই চেষ্টা করছেন দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার।
স্থানীয় কৃষক মোস্তফা গাজী ভোরের আকাশকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালো হয়েছে। আর সপ্তাহখানেক মাঠে থাকলে ধান পুরো পুষ্ট হতো। কিন্তু শুনছি দু-একদিনের মধ্যে আরেকটি ঝড় আসছে। তাই আগেভাবেই ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছি।
কৃষক নূরুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, বিলে আট বিঘা জমিতে আমন মৌসুমের ১০ ও ৮৭ ধান চাষ করেছি। ‘মিধিলির’ কারণে প্রায় দুই বিঘা জমির ধান ক্ষেতে নুইয়ে পড়ে। বিঘাতে ২০-২২ মণ ধান পেতাম। কিন্তু মিধিলির কারণে এ বছর কমপক্ষে ১০ মণ ধান কম পাব। আরও কিছু ধান চিটা হবে। কিন্তু আবার ঝড় আসছে শুনে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে আরও ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্ভব হতে পারে। এরপরও অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জমিন ধান গোলায় তোলা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু জায়গায় ধান এখনো অপরিপক্ব রয়েছে। আধা পাকা এই ধান পাকতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা ভোরের আকাশকে বলেন, ৮০ শতাংশ পেকেছে এমন ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না। তাই ঝড় ও ভারী বৃষ্টির আভাস পেয়ে কৃষকদের ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ মিগজাউমের প্রভাবে ঝড় ও ভারী বর্ষণ হলে কৃষকের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য