-->
শিরোনাম

পরিত্যক্ত জমিতে নিরাপদ ফসলের গ্রাম গিরিধরপুর

দিনাজপুর প্রতিনিধি
পরিত্যক্ত জমিতে নিরাপদ ফসলের গ্রাম গিরিধরপুর
গিরিধরপুর গ্রামে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ ফসলের ক্ষেত

দিনাজপুর বিরল উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ধুকুরঝারি বাজার। ধুকুরঝারি থেকে কাহারোল সড়কের পাশেই গিরিধরপুর গ্রাম। গিরিধরপুর গ্রামের প্রবেশ পথেই বিশাল এক সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ ফসলের গ্রাম। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনাতে বা বাড়ির সামনেই পরিত্যক্ত জমিতে ছোট ছোট প্লট তৈরি করছে।

 

প্রতিটি প্লটের সামনেই সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সাইনবোর্ড দেখলেই মনে হবে পুষ্টি মডেল গ্রামে আমরা প্রবেশ করেছি। প্রতি প্লটে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। চাষিরা বাঁশের তৈরি বেড়া ও নেট জাল দিয়ে সুন্দরভাবে ঘিরে রেখেছে সবজির বাগান। সুদৃশ্য নিরাপদ শাকসবজির বাগান দেখলেই মনটা ভরে যায়।

 

বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের গিরিধরপুর গ্রামের ৭৮টি পরিবারের মাঝে পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগানের জন্য সবজির বীজ সরবরাহ হয়েছে। এছাড়াও ফল, ভেষজ ও মসলা জাতীয় গাছ বিতরণ করা হয়েছে। বিরল উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রশিক্ষণ, রাসায়নিক ও জৈব সারসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে চাষিদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তদারকি করছে কৃষি বিভাগ।

 

ফলে এই গ্রামটি এখন পুষ্টি নিরাপত্তার মডেল গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই পুষ্টি গ্রামে এখন শীতকালীন লালশাক, ডাটা শাক, পালং শাক, লাপা শাখ, মুলা শাক, লাউ শাক, রসুন, পেঁয়াজ, টমেটো, শিমসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ হচ্ছে।

 

বসতবাড়ির সামনের পতিত ছোট ছোট জমিতে (অর্ধ শতক, এক শতক, দুই শতক, ৫ শতক) শাকসবজির বাগান করতে পেরে চাষিরা এখন উৎসাহিত হচ্ছেন। নিজেদের বাড়ির পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করারও সুযোগ পাচ্ছেন তারা। কীটনাশক ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতি, বিষ টপ, আঠার ফাঁদ এবং নেট হাউসের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে ২০২২ সালেই রীতিমতো দিনাজপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আলোচনায় চলে আসে বিরলের গিরিধরপুর গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ শাকসবজি।

 

এলাকাবাসী জানান, বালাইনাশক ছাড়াই বেগুন উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়ে আলোচনায় আসে এই এলাকার কৃষকরা। গত বছর বেগুন চাষ করে দিনাজপুর জেলায় ব্যাপক পরিচিতি পান চাষি মনোয়ার হোসেন। ওই এলাকায় অনেকে তাকে এখন বেগুন সেলিব্রেটি কৃষক নামেই চেনেন। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতনরা আসেন কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মাঠ দেখতে।

 

বিরল উপজেলার ৩নং ধামইর ইউপির গিরিধরপুর গ্রামের বাড়ির উঠান, আঙিনা, খুলিয়ান এবং সামনের বা পেছনের পতিত অনাবাদী জায়গাগুলো হয়ে উঠেছে একেকটি নিরাপদ পুষ্টির বাগান। যেখান থেকে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ শেষে উদ্বৃত্ত শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন অনেকেই।

 

কৃষক রমজান আলী জানান, আমাদের গ্রামে উৎপাদিত শাকসবজি এতটাই পরিচিতি পেয়ে গেছে যে, এইগুলো বিক্রির জন্য কৃষককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজারে দোকান সাজিয়ে বসে থাকতে হয় না। কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার বাগানের চারদিক দেশীয় ফলদ গাছে পরিপূর্ণ। তবুও মধ্যখানের জায়গায় লালশাক, সরিষা শাক, ধনে পাতা ও মসলা জাতীয় গাছ রোপণ করেছি। খরচ তেমন একটা নেই, এসব বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করতে পেরেছি। এভাবে প্রতিজন কৃষক জানালেন নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ ছাড়াও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পেরেছেন অল্পদিনেই।

 

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্বুদ্ধ করাসহ উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এখানে ৭৮টি পরিবারকে আমরা বেছে নিয়েছি, যার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে একেকটি পারিবারিক পুষ্টি বাগান। ২১ ধরনের শাকসবজি ভেষজ ও মসলা জাতীয় গাছের চারা সরবরাহ করা হয়েছে। জৈব বালাইনাশক, জৈব সার ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

 

আমরা চাই প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন পুষ্টি প্রবাহে যে শাকসবজি লাগে তা এই পরিবারগুলো নিজ নিজ পারিবারিক পুষ্টি বাগান থেকে পাবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version