বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পার হলেও এখনো হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস। ফলে প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ভাড়া করা ভবনে।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। জমি থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাস ও নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় চরম হতাশায় আছেন বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
জানা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় ২০১৫ সালের ৮ মে (২৫ বৈশাখ ১৪২২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালে সংসদে দেশের ৪০ তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন পাশ হয়। পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর শাহজাদপুরে ভবন ভাড়া নিয়ে ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ৩টি বিভাগে ১০৫ জন শিক্ষার্থী আর ৯ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
বর্তমানে ৫টি বিভাগে ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী, ২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আর ১৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। তবে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হয়নি।
শাহজাদপুরের ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্লাস চলছে। এছাড়াও ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর জন্য প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মাওলানা সাইফুদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজে সংকীর্ণ ক্লাস কক্ষে ক্লাস ও লাইব্রেরি কার্যক্রম চলছে। এতে উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে শাহজাদপুর উপজেলার মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবনে ও মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবনে। এর মধ্যে শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাঠদান হয় সংগীত, বাংলা, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান। আর মাওলানা সাইফউদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে হয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের ক্লাস। বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এ ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন কান্দাপাড়া এলাকায় একটি ছয়তলা ভবন ভাড়া নিয়ে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। সেখানেই অফিস করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ভোরের আকাশকে বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই অন্য একটি কলেজে গিয়ে আমাদের অধ্যয়ন করতে হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় না, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমার অনেক বন্ধু আছেন যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস আছে। নিজস্ব ভবন আছে। তাদের দেখলে নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। তাই পড়াশোনাসহ সার্বিক কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব ফেলছে।
সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হৃদয় আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী চান তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকবে। কিন্তু আমাদের ক্লাস করতে হয় অন্য একটি মহিলা কলেজে। যে কারণে আমরা অনেকটাই বিব্রত। আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তা মনেই হয় না। নতুন ভিসি স্যার আসার পরে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আজম ভোরের আকাশকে বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়টি নানাভাবে অবহেলিত ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
উপাচার্য আরও বলেন, সব জটিলতা কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির অংশের ২২৫ একর খাস জমি বরাদ্দ হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় বিল পেরিয়ে যেতে হয় সেই জমিতে। আশা করি, খুব দ্রুতই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে। সেটা পেলেই অবকাঠামো নির্মাণসহ স্থায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাস পাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
ভোরের আকাশ/ সৃু
মন্তব্য