-->
শিরোনাম

নবগঙ্গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, জড়িত প্রভাবশালীরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
নবগঙ্গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, জড়িত প্রভাবশালীরা
ঝিনাইদহের নবগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ নেই

ঝিনাইদহে প্রবহমান নবগঙ্গা নদীর আড়াই কিলোমিটারে সাত জায়গায় আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর ওই অংশের শ্রেণি পরিবর্তন করে চাদপুর বাঁওড় নামকরণ করা হয়েছে। এরপর ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত।

 

এলাকাবাসী জানায়, এলাকার মৎস্যজীবীসহ গ্রামবাসী নবগঙ্গা নদীর অবৈধ বাঁধ অপসারণের দাবিতে গত ১০ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এরপর তারা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি সংবলিত স্মারকলিপিও দেয়।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবগঙ্গা নদীটি জেলার হরিণাকুন্ডুর হামিরহাটি, চাদপুর, হাকিমপুর ও সদর উপজেলার জাড়গ্রাম অংশে ইংরেজি অক্ষর ‘ইউ’ আকৃতি ধারণ করে ঝিনাইদহ শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। ইউ আকৃতির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এর মাঝ বরাবর পড়েছে জাড়গ্রাম। জাড়গ্রামের তিন পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিল নদীটি। এখানে নদীর সাত জায়গায় মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

হামিরহাটি ও জাড়গ্রামের নদীপারের একাধিক বাসিন্দা ভোরের আকাশকে জানান, ২০০৭ সালের দিকে নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী হামিরহাটি, চাদপুর, হাকিমপুর এলাকার নদীর ইউ আকৃতির অংশের সাত জায়গায় চাদপুর গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।

 

নদীপারের সাধারণ গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে ওই সময় প্রতিবাদ করলেও কাজ হয়নি। নদীর দখলদাররা এক পর্যায়ে নবগঙ্গা নদীর হামিরহাটি, চাদপুর, হাকিমপুর, জাড়গ্রাম অংশের প্রায় ৬০ একর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করান। এ জন্য তারা ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে বাঁধ দেয়া নদীর অংশের চাদপুর বাঁওড় নাম দেন। সেই থেকে এলাকার ওই প্রভাবশালীরা প্রতিবার ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করছেন। এলাকার মৌজা ম্যাপে নবগঙ্গা নদীর সীমানা নকশায় স্পষ্টভাবে অঙ্কন করা রয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, মাছ চাষ করার কারণে পারের বাসিন্দাদের নদীতে নামতে দেয়া হয় না। নদীতে গোসল করতে দেয়া হয় না। গ্রামবাসী গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছে না। আগে গ্রামের কৃষকরা জমির সেচ, পাট পচানোর কাজসহ অন্যান্য কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতেন। এখন কৃষকরা পাট পচানোর পানির অভাবে পাটের আবাদ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।

 

জাড়গ্রামের আখের আলী ও আনোয়ার হোসেন জানান, চাদপুর গ্রামের ফজলু মালিতাসহ পাঁচ-ছয়জন ইজারা নিয়ে নদীতে মাছ চাষ করছেন। কারা নদীতে বাঁধ দিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে জানতে ফজলু মালিতার মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

 

জাড়গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী অমূল্য সাধু বলেন, ‘নবগঙ্গা নদীর ধারে এই গ্রামে আমাদের বাড়ি। আমাদের ঠাকুরদা-বাবারা এই নদীতে মাছ ধরে সংসার চালিয়েছেন। এই নদীর মাছ ধরে বিক্রির টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলত। বাড়ির নিচে নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ শুরুর পর আমাদের নদীতে নামতে দেয়া হয় না। আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৪০ ঘর মৎস্যজীবী পরিবার সবাই বেকার হয়ে পড়েছি। নদীটি অবমুক্ত করে আমাদের রুটি-রুজির পথ খুলে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

 

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৭ সালের দিকে চাদপুর বাঁওড় হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। ফলে আমাদের ইজারার কার্যক্রম চালাতে হবে। গত কার্তিক মাসে তিন বছরের ইজারা শেষ হয়েছে। এখন নতুন ইজারার কার্যক্রম চলছে।

 

তবে হামিরহাটি, জাড়গ্রাম, চাদপুর এলাকায় নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে চাদপুর বাঁওড় নামকরণ করা হয়েছে মর্মে এলাকাবাসীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version