-->

সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে সফল চাষিরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে সফল চাষিরা
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের বাগদা চাষিরা

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন চাষিরা। চিংড়িতে মড়ক না লাগা এবং দ্রুত বড় হওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা ব্যক্তিরা ৩ মাসে বিনিয়োগকৃত অর্থের দ্বিগুণ ফিরে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় বাগদা চিংড়ির এ ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে।

 

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় বাগদা চাষ হয় ২ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে। ছোট-বড় ৫৫ হাজার ঘেরে বাগদা চাষ হয়। এসব বাগদা চাষ হয় সনাতন পদ্ধতিতে। তবে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে কালীগঞ্জের শিবপুরে ১৩ একর জমিতে ২৩ জন চাষি ২৩টি ঘেরে বাগদা চাষ করেছেন। প্রতি ৩ মাস পরপর ঘের থেকে বাগদা চিংড়ি তুলে বিক্রি করতে পারেন চাষিরা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হয় প্রকল্পটি।

 

জেলার মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে নানা ধরনের ভাইরাস ও দাবদাহে ঘেরে বাগদা চিংড়ি মারা পড়ে প্রচুর। পরবর্তী সময়ে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করা হলেও সফলতা ছিল না তেমন। ফলে দিনে দিনে বাগদা চাষে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছিল চাষিদের। সাতক্ষীরার সাদা সোনাখ্যাত বাগদা চাষের এই সমস্যা মোকাবিলায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয় মৎস্য বিভাগ।

 

পানির গভীরতা ঠিক রাখা ও বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করা (নেট দিয়ে প্রতিটি ঘের অন্য ঘের থেকে আলাদা রাখা) এই চাষের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন এই পদ্ধতিতে জেলার অন্য বাগদা চাষিদেরও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছে এখন জেলার মৎস্য অধিদপ্তর।

 

শিবপুরের বাগদাচাষি মোক্তাদির হোসেন বলেন, ‘আমরা ২৩ জন মিলে এই প্রজেক্টে চাষ করছি। কালিন্দি নদী থেকে খালে লোনাপানি আসে। প্রথমে পানি ভর্তি করি ঘেরে। তারপর চুন মারার পর ব্লিচিং পাউডার দেই। এরপর ভাইরাসমুক্ত পোনা ছাড়ি। খাবার দেই নির্দেশনা মতো। ৭২ শতাংশ জমিতে আমি ১৮৫ কেজি মাছ পেয়েছি। অথচ আগে আমি মাছ তুলতে পেরেছি ৬০-৭০ কেজি।’

 

অপর চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পানির পিপিটি অনুযায়ী উৎপাদিত পোনা ছাড়া হয় বলে মড়ক নেই বললেই চলে। আগে পানির লবণাক্ততা ও ভাইরাস পরীক্ষা হতো না বলে ৪০ দিন যেতে না যেতে মাছ মারা যেত। এই পদ্ধতিতে মাছ মরে না বললেই চলে। নির্ধারিত পদ্ধতিতে আমরা মাছ চাষ করে শতকে তিন-চার কেজি মাছ উৎপাদন করতে পেরেছি।’

 

গুচ্ছ পদ্ধতিতে এই চাষ করা হয় বলে একত্রে এই চাষিদের বাগদা চাষি ক্লাস্টার নামে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বাগদা চাষি ক্লাস্টারের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘প্রথমে আমরা সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করতাম। আর এখন উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করছি। প্রথমে ঘেরের গভীরতা বাড়িয়েছি। বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে নেট দিয়েছি, যাতে অন্য ঘেরের পোকামাকড় এখানে না আসে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২৯ শতক জমিতে ৮৬ কেজি মাছ পেয়েছি। আগে সনাতন পদ্ধতিতে ৩০-৩৫ কেজির বেশি মাছ পেতাম না।’

 

মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সনাতন পদ্ধতিতে সফলতা কম বলে নতুন এই পদ্ধতির প্রচলন করেছেন তারা।

 

কালীগঞ্জের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে শিবপুরে ২৩ জন চাষি নিয়ে কাজ শুরু করি। সেখানে সফলতা ব্যাপক। বায়োসিকিউরিটি ও ভাইরাসমুক্ত পোনা ব্যবহার করা হয় ঘেরে। আমরা খুব আনন্দিত যে, মাত্র ৩ মাসে বাগদা এই আকৃতি পাচ্ছে যে, কেজিতে ২০টা ধরছে।’

 

এই মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন পদ্ধতিতে পানির গভীরতা নিশ্চিত করা হয়। এপ্রিল-মে মাসে ৩৭ থেকে ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। পানির গভীরতা থাকে ৬-৮ ইঞ্চি অথবা ১ ফুট। ফলে মাছ মারা যায়। নতুন এই পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দ্বিগুণ বা তিন গুণ লাভ পাওয়া যায় বলে এই পদ্ধতিতে চাষিদের চাষ করা উচিত।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version