-->

আশুরহাটে ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলেছে অতিথি পাখি

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
আশুরহাটে ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলেছে অতিথি পাখি
অতিথি পাখির কলতানে মুখর আশুরহাট গ্রাম

শীতের হাওয়ায় কাঁপছে গাছের পাতা। স্থির হয়ে আছে জলাশয়ের জল। ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ। প্রতি বছর শীতকাল এলেই বাহারি রঙের এমন অতিথি পাখির দল বাসা বাঁধে এ দেশের জলাশয়ে, বিল, হাওর আর পুকুরে। কিন্তু ঝিনাইদহের শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট এমন একটি গ্রাম যেখানে অতিথি পাখিরা আর অতিথি নয়, স্থায়ীভাবেই এখানে তারা বাসা বেঁধেছে বছর দশেক হলো। আশুরহাট নয়, বরং ‘পাখি গ্রাম’ নামেই মানুষ এখন বেশি চেনে এ গ্রামটিকে।

 

আশুরহাটের মানুষজন জানায়, বেশ কয়েক বছর আসা-যাওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। তারা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সেজন্য স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন গাছে বাসা বানিয়ে দেয়, পাহারার ব্যবস্থাও করে। লোক মুখে তখন থেকেই ‘পাখি গ্রাম’ নামে পরিচিতি পায় আশুরহাট। ২০১৩ সালেই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকার ১০ একর জায়গাকে ‘পাখির অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ের শিমুল, জাম ও মেহগনি গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় তারা এখানেই জায়গা করে নেয়। অবশ্য অনেক পাখি কেবল শীতের সময়েই থাকে, চলে যায় শীত শেষ হলে।

 

প্রশাসন থেকে পাখিদের নিরাপদ আবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও পুরো নিরাপদে নেই এই পাখিরা। রাতের আঁধারে এক শ্রেণির মানুষ মাঝেমধ্যেই পাখি শিকার করছে। অনেকে তাদের মালিকানাধীন গাছ কেটে ফেলছে। পাখিপ্রেমীদের আশঙ্কা, এর ফলে অতিথি পাখির বাসস্থান সংকুচিত হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে পাখির এই অভয়ারণ্য।

 

আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্য আরিফ জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের দুজন ব্যক্তি এই পাখি অভয়ারণ্যের গাছ কেটেছে। আরও কেউ কেউ গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কাটলে গ্রামটি পাখিশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী বলেন, ‘জমির মালিকরা মাঝেমধ্যেই গাছ কাটেন। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। কোনো শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে, সেজন্য আমরা সারারাত পাহারা দিই। কিন্তু গাছ না থাকলে পাখি থাকবে কোথায়?’

 

আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। দ্রুত গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে পাখি যেমন থাকবে না, তেমনি আগামী দিনে অতিথি পাখিও আসবে না এই এলাকায়।

 

জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখির অভয়ারণ্যে গাছ কাটার খবর পেয়েছি। পাখিদের আবাসন নিশ্চিত করতে এবং অভয়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

প্রসঙ্গত, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের সব বয়সি মানুষ মুগ্ধতা নিয়ে আশুরহাটে পাখিদের ওড়াওড়ি আর চলাচলের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করে থাকে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version