-->

হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ
কৃষক মোশাররফ হোসেন গরু দিয়ে হালচাষ করছেন

কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি খেতে চাষের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ারট্রিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙল ও জোয়াল দিয়ে জমিতে হালচাষ।

 

আদিকাল থেকেই কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙল ও মই। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙল। তবে এ যুগেও হোসেনপুর উপজেলার চরাঞ্চল জুড়ে ফুরায়নি গরুর লাঙল দিয়ে জমি চাষ।

 

এক সময় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দেখা যেতো সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেড়িয়ে যেতো মাঠে। বামে-ডানে হুট-হাট শব্দে গরুকে তাড়া করে চলে জমিতে হালচাষ। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেতো তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। বাংলার গৃহবধূরা লালপেড়ে শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের নিকট। কৃষকরা মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো। জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার করে বীজ বপন করে সোনার ফসল ঘরে তুলে আনতো। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকতো। এসবই বইয়ের পুথিগাথা গল্পের মতো শোনায়।

 

রোববার সকালে সরেজমিনে হোসেনপুর উপজেলার চরকাটি হারী গ্রামের কৃষি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙল দিয়ে একজন কৃষক জমি চাষ করছে। তার নাম মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘হালচাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙল-জোয়াল, মই, গরু তাড়ানোর লাঠি, গরুর মুখের টোনা (মুকির) লাগে। পাওয়ারট্রিলারে আগমনে গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে।

 

তিনি আরো বলেন, গরুর লাঙল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো তেমনি ফসলও ভালো হতো। পাওয়ারট্রিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হালচাষের কদর কমে গেছে।

 

জানা যায়, হোসেনপুরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙল-জোয়াল, ফাল, দা, কাস্তে, খুনতি, মই, গরু ও মহিষ এখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে গরু থাকলেও লাঙলে হালচাষ নেই। অনেকেই তার বাপ-দাদার পেশা গরুর লাঙল দিয়ে জমি চাষকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম শাহজাহান কবির জানান, উপজেলায় চরাঞ্চলে এখনো গরুর লালে জমি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। গরুর লাঙলে জমির চাষাবাদে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version