‘ময়না দ্বীপ’ বলুন তো কোথায়? হয়তো কারও কাছে চেনা কিংবা কারও কাছে অচেনা। যারা বই পড়ুয়া, যারা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়েছেন তাদের কাছে খুবই পরিচিত। সেটি ছিল মানুষ বসবাসের অনুপযোগী, যা আমরা রাসুর মুখ থেকে জানতে পারি।
অথবা যারা ময়মনসিংহে গিয়েছেন তাদের কাছেও পরিচিত। চেনা হয়ে গেছে এ দ্বীপ। কারণ বিভাগীয় এ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে আছে ‘ময়নার চর’। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কাছে ব্রহ্মপুত্র নদীতে জেগে ওঠা এই চরটি নামও এখন ‘ময়না দ্বীপ’।
আরও একটি ‘ময়না দ্বীপ’ আছে। যার অবস্থান উত্তরবঙ্গে। এ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) একদম পেছনে পুকুর পাড়ে ছিল এ দ্বীপ। মাটির টিলার মতো উঁচু একটি জায়গা। এখন এ দ্বীপ চোখে পড়ে না। টিলার মাটি কেটে ব্যবহার করা হয়েছে অন্যান্য কাজে।
কয়েক বছর আগেও হাবিপ্রবিতে যে দ্বীপের অস্তিত্ব ছিল এখন এর ছায়াও নেই। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এক অচেনা স্থান। এই ‘ময়না দ্বীপ’ এখন শুধু নামে আর হুডির সামনে একটি চিত্র। কিন্তু এটির অবস্থান আর নামকরণের ইতিহাস তাদের অজানা। তবে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে এ দ্বীপ এখন অন্তরালে। কিন্তু হাবিপ্রবির সেই ‘ময়না দ্বীপ’ ছিল ছায়াঘেরা ও গাছগাছালিতে ভরপুর।
হারিয়ে যাওয়া এই দ্বীপ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হাবিপ্রবিসাস’র সভাপতি মো. তানভীর আহমেদ জানান, পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, ১৫-২০ ফুট উঁচু মাটির একটি ধ্বংসাবশেষ ছিল হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। যা ‘ময়না দ্বীপ’ নামে পরিচিত। তার ঠিক উত্তর দিকে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গবেষণা পুকুর এবং দক্ষিণ দিকে বঙ্গবন্ধু হল। বিভিন্ন সংগঠন ও ক্লাবের চড়ুইভাতি এবং কপোত-কপোতিদের ঘোরাঘুরির স্থান হিসেবে এটি ছিল সমাধিক প্রসিদ্ধ। চা বাগান করার পরিকল্পনা নিয়ে এটি তৈরি করা হলেও পরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ করোনার বন্ধে গবেষণা মাঠ সম্প্রসারণের জন্য মাটি কেটে জায়গাটি সমান করা হয়। আর এর মাধ্যমেই অবসান হয় হাবিপ্রবির অন্যতম দ্বীপ, ‘ময়না দ্বীপের’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর হোসাইন বলেন, ক্যাম্পাসে আসার পর আমরা ‘ময়না দ্বীপে’র নাম শুনি। খুবই সুন্দর আর মনোরম একটি জায়গা। শিক্ষার্থীরা ভালো সময় কাটাতো এখানে। সবার পরিচিত একটি স্থান। এখন কাটা হয়েছে এ দ্বীপের মাটি। তবে পুকুর পাড়ে বেশকিছু বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসে সুন্দর সময় কাটায়। তারপরও ময়নাদ্বীপ নিয়ে আমাদের মাঝে আক্ষেপ থেকে গেছে। যদি দ্বীপটা থাকত ভালোই হতো। কোভিড-১৯ এর পর ক্যাম্পাসে ফিরে আর পাইনি।
গণিত বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী অলংকার গুপ্তা বলেন, উত্তরের জ্ঞানের সাম্রাজ্য হলো হাবিপ্রবি। গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অনেক চাঞ্চল্যকর নাম, বৈশিষ্ট্য, কিছু জায়গা। যেমন এলিয়েন রোড, টাইটানিক রোড, ফাঁকিবাজ চত্বর, হতাশার মোড়, ময়না দ্বীপ ইত্যাদি। ইতোমধ্যে এসব স্থানের কিছু কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তেমনি ময়না দ্বীপ একটি। আমরা যখন প্রথম বর্ষে ছিলাম তখন ময়না দ্বীপকে কেন্দ্র করে সবার মাঝেই একটি আলাদা উদ্দীপনা ছিলো। তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় সবাই এর ওপরে উঠতে পারত না। কিন্তু অনেকেই সাহস জুগিয়ে উঠে যেত। আবার এই দ্বীপের আশপাশে আয়োজন করা হতো পিকনিক। অনেককে দ্বীপের উপরেও পিকনিক করতে দেখা যেত। বর্তমানে এটিকে কেটে সমতল করা হয়েছে। ফলে অনেকেই এই দ্বীপ সম্পর্কে অবগত নয়।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য