-->
শিরোনাম
নদীর কান্না

গোমতীর চর ক্ষতবিক্ষত, বিপর্যয়ের মুখে নদী

কুমিল্লা প্রতিনিধি
গোমতীর চর ক্ষতবিক্ষত, বিপর্যয়ের মুখে নদী
গোমতীর চর থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যায় ভূমিদস্যুরাগোমতীর চর থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যায় ভূমিদস্যুরা

গোমতী নদী কুমিল্লার প্রাণ। কুমিল্লার মানুষের আবেগ-ভালোবাসার সঙ্গে মিশে আছে এ নদীর নাম। এখনও সুযোগ পেলে গোমতীর ধারে ছুটে যায় হাজারো মানুষ। বর্তমানে বিশুদ্ধ বাতাসের বদলে মানুষের নাকে ঢুকছে দূষিত ধুলাবালি। চর কেটে সাবাড় করায় বিপর্যয়ের মুখে এ নদী। সঙ্গে বিপন্ন পরিবেশ।

 

গোমতী নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে উৎপত্তিস্থলসহ ১৭ কিলোমিটার ভারতের ত্রিপুরা অংশে। বাকিটা ১০৩ কিলোমিটার অতিবাহিত হয়েছে কুমিল্লার পাঁচ উপজেলা আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দি দিয়ে। এ ১০৩ কিলোমিটার অংশের চরজুড়ে আবাদ হতো সবজি ও ফলমূল।

 

সম্প্রতি গোমতীর কুমিল্লা আদর্শ সদর ও বুড়িচং এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার টিক্কারচর থেকে বুড়িচংয়ের ভান্তীর চর পর্যন্ত এলাকার চর একেবারেই ক্ষতবিক্ষত। পুরো চরই কেটে নিয়ে গেছে ভূমিদস্যুরা। এসব এলাকার মধ্যবর্তী কোনো জায়গা খালি রাখা হয়নি। অতিরিক্ত মাটিবাহী ট্রাকের চাপে নদীর দুই পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কেটে ফেলা হয়েছে বেড়িবাঁধ। নদীর বেশ কিছু পয়েন্ট থেকে কাটা মাটি ট্রাক বোঝাই করে নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে ভূমিমালিকদের থেকে চরের জায়গা কিনে নেন ইটভাটার মালিকরা। মাটি কাটা হয় ভেকু মেশিন দিয়ে। মাটি এমন গভীরভাবে কাটা হয় যেন পাশের ভূমিও বর্ষায় ভেঙে পড়ে; যার কারণে বাধ্য হয়েই মাটি বিক্রি করে দেন ভূমিমালিকরা।

 

সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে গোমতীর মাটি কাটা বন্ধে ৫৮টি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অনেককে সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া দিনরাত টহলের মধ্যে থাকেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। চলতি অর্থবছরে গোমতীর দিকে তেমন নজর দিতে পারছে না প্রশাসন। জেলা প্রশাসনে লোকবলের সংকট আছে।

 

সূত্র আরও জানান, যে গাড়ি জব্দ করা হয়, নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় তা নিজেদের জিম্মায় রাখতে পারে না জেলা প্রশাসন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোমতীতে বালুমহালের ইজারা ছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত বালুমহালের ইজারা নিতেন কুমিল্লা মহানগরী আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার লোকজন। পরের বছর তা আরেক প্রভাবশালী নেতার লোকজনকে দেওয়া হয়। এ সময় আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু এ নিয়ে প্রথম পক্ষ অসন্তুষ্ট হয়। তারা বালুমহালের আড়ালে মাটি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে, এমন যুক্তি দেয়। এক বছর পরেই গোমতীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু বালুমহাল বন্ধ হলেও মাটি কাটা চলছে। চাউর রয়েছে, এ দুই নেতার লোকজনই ভাগাভাগি করে গোমতীর মাটি কেটে সাবাড় করছেন।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমাদের নাগরিক সংগঠনের ব্যানারে গোমতী নদী, লালমাই পাহাড়, জলাশয় রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরে দাবিদাওয়া উত্থাপন করছি। কিন্তু সেই পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা অনুভব করেনি প্রশাসন। গোমতী বাঁচাতে হবে, নইলে কুমিল্লার মানুষের কপালে দুঃখ আছে।’

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘নদী, পাহাড়, জলাশয় এগুলো জেলা প্রশাসনের আওতাধীন। আমরা কারিগরি দিকগুলো দেখি। জেলা প্রশাসন যদি চায় গোমতী রক্ষায় আমরা কোনো অবদান রাখতে পারি, সে ক্ষেত্রে সহায়তা করব।’

 

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যেখানে মাটি কাটার সংবাদ পাচ্ছি, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version