-->
শিরোনাম

নদীতে কমছে ইলিশ, খাঁচায় মাছ চাষে জীবিকা নির্বাহ

মোকাম্মেল মিশু, ভোলা
নদীতে কমছে ইলিশ, খাঁচায় মাছ চাষে জীবিকা নির্বাহ
নদীতে খাঁচা ফেলে মাছ চাষ করছে জেলেরা

নদী বা সাগর কোথাও দেখা মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশের। দু’চারটা পাওয়া গেলেও উঠছে না খরচের টাকা। এ অবস্থায় চরম দুর্দিন চলছে জেলেদের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করছে ভোলার জেলেরা। অন্য পেশায় খাপ খাওয়াতে না পেরে কেউ কেউ নদীতেই খাঁচা ফেলে মাছ চাষ করে টিকে আছে। ইলিশ শিকারী হওয়ার চেয়ে মাছ চাষী হওয়ার জন্য জেলেদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

 

দেশে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তার ৩ ভাগের ১ ভাগই মেলে নদী বেষ্টিত দ্বীপজেলা ভোলা থেকে। দ্বীপটি সৃষ্টির শুরু থেকেই এখানকার অধিকাংশ মানুষ ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জেলেরা জাল-নৌকা আর রসদ নিয়ে নদী বা সাগরে নেমে লাভবান তো দূরের কথা খরচের টাকাই তুলতে পারছেন না।

 

জেলে ও জেলে সমিতির নেতা এবং ব্যবসায়ীদের দাবী, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে নদীর গতিপথ এবং ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র। যে কারণে ভোলা ও তার আশ-পাশের এলাকায় এখন আর কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ শিকারি জেলেরা পেশা পরিবর্তন করে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। তবে হাল ছাড়েন নি অনেকে। ইলিশ না আসা পর্যন্ত, মাঝের এই সময়টুকুতে টিকে থাকার জন্য তারা খাঁচায় মাছ চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

 

ভোলার দৌলতখান ঘাটের জেলে মো. রহমান মাঝি বলেন, ‘আগে আমরা নদীতে ভরপুর মাছ পাইছি। এখন নদীতে মৌসুম চইলা যাইতেছে তারপরও কোন মাছ পাওয়া যাইতেছে না। কারণ নদীর যেই মুখটা আছে, সেটা আগে প্রচুর চওড়া ছিলো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন মুখটাতে অনেকগুলো চর হয়ে গেছে। নদীর যেখানে চর থাকে সেখানে জাল ফালাইলে মাছ ওঠে না। মাছ পাইতে হইলে নদীর গভীরতা লাগে। মাছের একটা দৌড় আছে। চর থাকলে তো আর মাছ দৌড় দিতে পারেনা। এজন্য মাছের উৎপাদনটাও কম হয়, আমরাও পাই কম।’

 

ভোলার তুলাতুলি ঘাটের জেলে মো. শফিক মাঝি বলেন, ‘আমাদের ভোলার চতুর দিক দিয়েই নদী। এসব নদীতে আগে প্রচুর মাছ ছিলো। আমরা প্রচুর মাছ পাইতাম। কিন্তু এখন আর নদীতে আমরা আগের মতো মাছ পাই না। যেই মাছ পাই তাতে আমাদের সংসার চলে না।’

 

ভোলার শান্তির হাটের বাসিন্দা মো. সোহাগ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে এখন আর আগের মত ইলিশ মাছ আসে না। এখন আমরা নদীতে ভাসমান খাঁচার মধ্যে মাছ চাষ করতেছি। ভাসমান খাঁচার মাছটা খাইতেও অনেক সুস্বাদু। তবে সরকার যদি আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করতো তাইলে আরো ভালো হইতো।’

 

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় খাঁচায় মাছ চাষ করে সাবলম্বী হওয়ার বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিচ্ছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, ভোলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার। এর বাইরেও মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত আছে আরো ২ লাখ মানুষ।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version