হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের কাওনা এলাকায় নরসুন্ধা নদের উপর নির্মাণাধীন গার্ডার সেতুর কাজ ফেলে ঠিকাদার বার বার উধাও হওয়ার অভিযোগ এলাকাবাসীর। চার মাসের কাজ তিন বছরেও শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া উপজেলাসহ ঢাকায় চলাচলকারী হাজারো যাত্রীকে।
স্থানীয় জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই কাদা মাটিতে গাড়ি পিছলিয়ে নদে পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশের চুক্তির বর্ণনা এমন কী সামনে সেতুর কাজ চলমান এমন সর্তকমূলক সাইনবোর্ড না টানিয়েই দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রাখায় জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ঈদুল আজহার পর গার্ডারের কাজ শেষ হলেও এর পর থেকে সেখানে আর কোন শ্রমিকের সন্ধান মিলেনি। এখনো দু’দিকের রেলিং ও সংযোগ সড়কের কাজ ফেলে রাখায় দু’পাশের অনেক রড চুরি হওয়ার আলামত পাওয়া গিয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় চর কাওনা এলাকার আব্দুল কাদির, মো. মফিজ উদ্দিন, সৃজন মিয়াসহ অন্তত ২০ জনের সাথে। এ সময় সকলেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পদ্মা সেতু করতেও এত সময় লাগেনি।
এসময় আব্দুল কাদির বলেন, ‘এ ব্রীজ হলো আমাদের গলার জইল। এ ব্রীজ হলো আমাদের কলঙ্ক। এ ব্রীজের কাজ করার সময়ে দু’পাশে কোন সর্তকমূলক সাইন বোর্ডের ও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সেজন্য ইতি মধ্যে এখানে দু’জন লোক মারা গেছে। এ ছাড়াও প্রতিদিন এখানে ডাইভারসনে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান পড়ে যায়। এসময় অনেকেই আহত হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তারাকান্দি বাজারের সবজিবাহী অটোরিকসা উল্টে গিয়ে নদে পড়ে যায়। ডাইভারসনে ভাংগা ও ঢালু না থাকায় অনেকগাড়ীর বাম্পার ভেংগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অটোরিকসাকে কয়েকজন মিলে ঠেলে উপরে উঠাতে হয়। শুকনা মৌসুমে ধুলা-বালিতে নাক-মুখ বন্ধ হয়ে যায়; আর বৃষ্টি হলে গাড়ি পিছলে উল্টে যায়।’
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৩৭৮০ মিটার চেইনেজে, ৪০ মিটার দৈর্ঘের পিসি গার্ডার ব্রীজের নির্মাণ কাজের জন্য ২০২১ সালের ১১ ফ্রেব্রুয়ারীতে কুমিল্লার এইচ/এন-৪৬৪, পুনাম পেলস্ , এইচটিবিএল সার্চ (জেবেকা) এর সাথে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কের কাওনা এলাকার নরসুন্ধা নদের উপর ব্রীজটি নির্মাণের চুক্তি হয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সাব-কন্টাক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয় জেলার এস আলমের সাথে। যা সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিলো ওই বছরের মধ্যে। সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে বারবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উধাও হওয়ায় কাজ সমাপ্ত করাতে পারছেন না প্রকৌশল অধিদপ্তর।
হোসেনপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী আব্দুল হক বলেন, গত দেড় মাস ধরে কন্টাকটারের নম্বরে ফোন দিচ্ছি। কিন্তু এরা কেউ ফোন ধরছে না। উপজেলা প্রকৌশলী গালীব মুরশীদ বলেন, মূলত এ রকম সেতু করতে দেড় মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় জন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারকে দ্রুত সময়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য