পাইকগাছার কৃষিতে অতি আধুনিক প্রযুক্তি পলিনেট হাউজের ছোঁয়া লেগেছে। উপকূলের কৃষকদের অল্প জমিতে অনেক ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে পলিনেট হাউজ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় উপকূলের কৃষিতে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি পলিনেট হাউজ। পলিনেট হাউজ উন্নতমানের পলি ওয়েলপেপারে আবৃত চাষযোগ্য কৃষি ঘর। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি।
এ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল ফলানো যায়। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ ও অক্ষত রাখা যায়। পলিনেট হাউজে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় ফল-ফসল ও সবজি চারা আগাম উৎপাদন করা সম্ভব।
গ্রীণহাউসের আদলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন এই পলিনেট হাউজ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামাল দিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, রোগবালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধ, বীজতলার মান নিয়ন্ত্রণ এবং অসময়ের সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিকাজের জন্য পলিনেট হাউজের কোনো জুড়ি নেই। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না।
এই পলিনেট হাউজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালিতে ২০ শতক জমির ওপর এই হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক কৃষির নতুন প্রযুক্তি পলিনেট হাউজ। ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছার হরিঢালী গ্রামে গড়ে উঠেছে এ পলিনেট হাউজ।
হরিঢালী গ্রামের শিক্ষিত যুবক তৈহিদুর ইসলাম পলিনেট হাউজ কৃষি প্রযুক্তি উদ্যাক্তা। তিনি মেডিকেলে ডিপ্লোমা করেছেন। তিনি ১২ বিঘা জমিতে ড্রাগনসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেছেন। তিনি এলাকার একজন সফল কৃষি উদ্যাক্তা। তৈহিদুর ইসলাম জানান, পলিনেট হাউজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শীত মৌসুমে বেগুন, মরিচ, টমেটো, পেপে, তরমুজসহ বিভিন্ন সবজির চারা তৈরি করবেন। তবে মূল লক্ষ্য তরমুজ উৎপাদন করার। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পলিনেট হাউজ তৈরি করা হয়েছে নেট, পলি এবং লোহা বা বাঁশের অবকাঠামো দিয়ে। চারপাশে নেট গিয়ে ঘেরা হয়। আর উপরের অংশ পলিথিন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়েছে। পলিনেট হাউজ তৈরি করতে বিশেষ তাপমাত্রা সহনশীল বিশেষ পলিথিন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মেশিন লাগানো হয়েছে। এর সঙ্গে জৈব সার আর নারিকেলের ছোবলা পচিয়ে বিশেষ উপাদান তৈরি করতে হয়েছে।
ভেতরে যেসব সবজির আবাদ করা হবে, সেগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর এর ভেতরের অংশে চাষাবাদের জন্য পলিমাটি, ভরাট বালি, ছাই, গোবর সার, খৈলসহ নানা উপকরণ মিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়েছে চাষের জমি। সেখানে পলিথিনের আচ্ছাদন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকবে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য