-->

চাহিদা কম, চিংড়ি রপ্তানিতে ভাটা

খুলনা ব্যুরো
চাহিদা কম, চিংড়ি রপ্তানিতে ভাটা
অনুৎসাহিত হচ্ছেন চিংড়ি ব্যবসায়ীরা

বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর ২০২৩ সাল। মহামারি করোনার সংক্রমণের পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দরপতন, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারা বছরই কেটেছে অর্থনৈতিক মন্দা ও টানাপড়েনে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা বছর ধরেই হতাশায় কেটেছে খুলনাঞ্চলের প্রধান রপ্তানিপণ্য চিংড়িসহ মৎস্য রপ্তানি খাত।

 

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। আর মৎস্য খাতের রপ্তানির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে বছর শুরু হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, খুলনা-মোংলা রেললাইন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে সম্ভাবনার হাতছানি তৈরি হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।

 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৩৯১.৬২ টন। যার বাজারমূল্য ১১৪০ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৯০.৬২ টন। যার বাজারমূল্য ছিল ১৫২২ কোটি টাকা। পাঁচ মাসেই মৎস্য খাতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৮২ কোটি টাকা।

 

একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা মূল্যের ৭ হাজার ৭৪১ টন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় রপ্তানি ছিল ১০ হাজার ৪৩ টন। যার বাজারমূল্য ছিল ১৪৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের পাঁচ মাসে চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ৫৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া পাবদা, ট্যাংরা, ভেটকি, পারসেসসহ সাদা মাছের রপ্তানি কমেছে ৬৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) খুলনা অঞ্চল থেকে সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ টন। যার বাজারমূল্য ছিল ২১২ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৪৮ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৫০ টন।

 

খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চিংড়ির প্রধান বাজার ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, রাশিয়া ও চীন। কিন্তু বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চিংড়ির রপ্তানি কমার পেছনে মূল কারণ বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস ও দাম কম। তবে লোকাল বাজারেও এখন অনেক ভালো দামে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার রেশ কেটে গেলে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, বিশ্বমন্দা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারে দরপতন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট, রিজার্ভ সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি খাত বেশ সংকটের মধ্যেই চলতি বছর অতিবাহিত করেছে। তা ছাড়া অধিক উৎপাদনশীল ভেনামির সঙ্গে দেশীয় বাগদার বিশ্ববাজারে মার খাওয়া ও সরকারিভাবে ভেনামির বাণিজ্যিক চাষে অনুমোদন দিলেও সম্প্রসারিত না হওয়ায় কাঁচামালের সংকট ইত্যাদি কারণে চিংড়ি রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানির টার্গেট পূরণ হয়নি। তবে সরকারের উদ্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ায় আগামীতে চিংড়ি ও হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি বাড়বে বলেও তিনি আশা করেন।

 

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, মৎস্য খাতে রপ্তানি কমলেও বিগত কয়েক বছরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগবান্ধব ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইনে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে; যা ডেল্টা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

 

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট নিয়ে বছরটা খারাপ কেটেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক শিল্প-বাণিজ্যে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চালু হয়েছে খুলনা-মোংলা রেললাইন। মোংলা বন্দর থেকে এসে খুলনার ফুলতলা পয়েন্টে রেলপথটি সারা দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি হয়ে কাঙ্খিত টার্গেটে পৌঁছাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version