জেলার আলীকদমে প্রশাসনের অভিযান, জরিমানার পরও বন ধ্বংস করে কাঠ পাচার থামছেই না। সরেজমিন বৃহস্পতিবার আলীকদম থেকে থানচি উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে দেখা যায় সড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার বাম পাশে এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা ধরে হেঁটে নামার সময় এক্সক্যাভেটরের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সাংবাদিকদের দেখতে পেয়ে এক্সক্যাভেটরের চালক ও বনের গাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা পালিয়ে যায়।
আলীকদম-থানচি সড়ক থেকে ঢালু কাঁচা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের মতো। রাস্তাটির শেষে পাহাড়ের পাদদেশে পাথরে ভরা তৈপোয়া অ ঝিরি রয়েছে। ঝিরিটি পর্যটন স্পট দামতুয়া ঝরনার খালে মিলিত হয়েছে। তৈপোয়া অ ঝিরির দুই পাশের পাহাড়ের প্রাকৃতিক বনের বিশালাকৃতির বনজ মাতৃবৃক্ষ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। দুই পাহাড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক বিশালাকৃতির গাছ কাটা হয়েছে।
কথা হয় রুহুল আমিনসহ দুই শ্রমিকের সঙ্গে। দু’জনেরই বাড়ি আলীকদমের চান মিয়া পাড়ায়। পাহাড় কাটার পর এখন রাস্তা মেলানোর কাজ করছেন জানিয়ে তারা বলেন, ‘রাস্তার কাজ ও গাছ কাটাচ্ছেন আলীকদমের আবু হানিফ ও শাহজাহান নামের দুই ব্যক্তি।’ অন্যদিকে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৩ কিলোমিটার এলাকায়ও একইভাবে বাম পাশে পাহাড় কেটে কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এ রাস্তা ব্যবহার করে ডিম পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কাঠ পাচার করা হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ট্রাকভর্তি কাঠ নিয়ে যাওয়া হয় আলীকদমের দিকে। ট্রাকে কাঠ থাকার বিষয়টি অন্য কেউ জানতে না পারে সেজন্য এর উপরিভাগে ইটভাটার জ্বালানি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় আলীকদমের ইসমাইল নামের এক সওদাগরকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
১৮ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড়কাটা ও বনের গাছ কাটার কথা স্বীকার করেছেন আবু হানিফ। তার দাবি, এটি মংথোয়াই নামের একজনের ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। তার কাছ থেকে গাছগুলো কিনেছেন। কাঠ পরিবহনে পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। সেলফোনে সংযোগ না পাওয়ায় মংথোয়াইর বক্তব্য মেলেনি। আলীকদমের ইসমাইলও গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কাঠ পাচারে ব্যবহৃত গাড়িটি কয়েকজন মিলে কেনা হয়েছে বলে দাবি তার।
সম্প্রতি আলীকদম-থানচি সড়কের ১১ কিলোমিটার এলাকার উত্তর দিকের গহিনে খাস পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কাঠ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাঠগুলো পাচার করা হয় উপজেলা সদরের পান বাজারের বাম পাশের কার্পেটিং সড়ক ব্যবহার করে। কাজটি করছেন আলীকদমের হাসেম কোম্পানি নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। বিষয়টি স্বীকার করে ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, ‘আমি একা নই। ওসমান, বিলু ড্রাইভার, কুদ্দুস, রহিমসহ আরো ৮-১০ সওদাগরের কাজ চলছে সেখানে।’
লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন খান জুলফিকার আলী। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ১৮ কিলোমিটার এলাকায় পরিদর্শন করে বনের গাছ কাটতে দেখেননি বলে ভোরের আকাশকে জানান তিনি। এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর ২৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। পরে আইন অনুযায়ী ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হলে ইসমাইল নামের জনৈক ব্যক্তি পরিশোধ করেন।
এলাকাগুলোয় শিগগিরই অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, তাদের তদন্তে গত ১ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা মিলেছে। কাঠ পরিবহনের জন্য টংকাবতী ইউনিয়নের দক্ষিণ খেদার ঝিরিঘেঁষা পাহাড় কেটে রাস্তা করার কাজে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
১৮, ২৩ ও ১১ কিলোমিটার অংশ থেকে পাচার করা কাঠ জব্দসহ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ওই এলাকায় বন বিভাগের সৃজিত বা সংরক্ষিত কোনো বন নেই। সব বন সরকারি খাসজমিতে।’
খাস পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন কাটা নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানি। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, প্রকৃতি বিধ্বংসী সব ধরনের কাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য