-->
শিরোনাম

যশোরের বনজঙ্গলে বেরিয়ে এলো ১২০০ বছর আগের স্থাপনা

যশোর প্রতিনিধি
যশোরের বনজঙ্গলে বেরিয়ে এলো ১২০০ বছর আগের স্থাপনা
স্থাপনাটির সন্ধান পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ধনপোতা ঢিবিতে চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ। একসময়ের গা ছমছম করা বনজঙ্গলের মধ্যে বহু পুরোনো এই স্থাপনাটির সন্ধান পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের ধারণা, এ স্থাপনা আনুমানিক ১ হাজার ২০০ বছর আগের। তারা বলছেন, খননকাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

 

সমতল ভূমি থেকে কিছুটা উঁচু ঢিবি। ঢিবিটি একসময় ছেয়ে ছিল ঝোপঝাড়ে। খননের ফলে এখানে প্রাচীন স্থাপনার চিহ্ন বেরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে দুটি চওড়া ইটের দেওয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে।

 

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের ধনপোতা এলাকার কলেজশিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা এই ঢিবির আশপাশে ভিড়তে পারতাম না। গোটা ঢিবিজুড়ে ছিল জঙ্গল। পাঁচ হাত দূরের জিনিসও দেখা যেত না। কদিন হল বনলতা পাতা সরিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোকজন ঢিবিতে খনন কাজ শুরু করেছে। আমরা খনন কাজ দেখেছি এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এখানে কী ছিল। তারা আমাদের জানাতে পারেননি, এখানে মন্দির না কি অন্য কিছু ছিল।

 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের দল বলছে, ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে কেশবপুরের ভরতভায়নার ভরতের দেউল এবং মণিরামপুরের দোনার এলাকার দমদম পীরের ঢিবির ইটের সঙ্গে মিল রয়েছে।

 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে মণিরামপুর উপজেলার দমদম পীরের ঢিবিতে খননকাজ করা হয়। তখন একটি অনুসন্ধানে উপজেলার খেদাপাড়া ধনপোতা ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। গত ১০ ডিসেম্বর ধনপোতা ঢিবির খননকাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে ছয়জন শ্রমিক একটি বর্গে খননকাজ শুরু করে। এখন ১৭ জন শ্রমিক ৮টি বর্গে খননকাজ করছে। খননের দ্বিতীয় দিনেই একটি দেয়ালের সন্ধান মিলেছে। পরে আরও একটি দেয়ালের সন্ধান পাওয়া যায়।

 

দেয়ালে দুই ধরনের ইট পাওয়া গেছে। একটি ইটের দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং অপরটির দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ২২ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৬ সেন্টিমিটার। দেয়ালের গাঁথুনি কাঁদার। দেয়ালে চুনের জমাট বাঁধা রয়েছে। এ ছাড়া খননে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও লোহার পেরেক পাওয়া গেছে। চলতি জানুয়ারি মাসজুড়ে খননকাজ চলবে।

 

ধনপোতা ঢিবির মালিক খেদাপাড়া গ্রামের ছয় ব্যক্তি। তাদের একজন প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ‘ঢিবিটিতে জমির পরিমাণ ৫৭ শতক। ঢিবিটি আমাদের ঠাকুরদাদাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনও বসতি দেখেননি। ঢিবিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ভরে ছিল। এখন সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন করছে।’

 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (খুলনা বিভাগ) আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ধনপোতা ঢিবি খননে এখন পর্যন্ত দুটি চওড়া ইটের দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেয়ালের গাঁথুনি কাঁদার। দেয়ালে চুনের জমাট বাঁধা রয়েছে। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইট ও গাঁথুনির সঙ্গে কেশবপুরের ভরতভায়নার ভরতের দেউল এবং মণিরামপুরের দোনার এলাকার দমদম পীরের ঢিবির ইট ও গাঁথুনির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থাপনাটির আনুমানিক সময়কাল খ্রিষ্টীয় নবম-দশম শতক।’

 

এখনও ঢিবিটিতে খননকাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খননের কাজ আরেকটু দৃশ্যমান হোক, তারপর বলা যাবে এটি কী ধরনের স্থাপনা।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version