-->
শিরোনাম

পোকার আক্রমণে নষ্টের পথে শতবিঘা জমির ভুট্টা

দেখা নেই কৃষি কর্মকর্তাদের

নীলফামারী প্রতিনিধি
পোকার আক্রমণে নষ্টের পথে শতবিঘা জমির ভুট্টা
হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা

কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নীলফামারীতে বেড়েছে ভুট্টা চাষ। এবারও তাই ব্যাপক আবাদ করা হয়েছে। তবে ভুট্টা খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। অথচ পরামর্শ ও সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনে দেখা মিলছে না কৃষি কর্মকর্তাদের । দিশেহারা কৃষকরা তাই বাধ্য হয়ে ছুটছেন কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছে। কিন্তু তাদের দেয়া ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। ফলে প্রায় শত বিঘা জমির ভুট্টা নষ্ট হওয়ার পথে।

 

তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, বীজ পরিশোধন করে ভুট্টা চাষ করলে পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ৮০১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

 

তবে এবার সদরে আবাদকৃত ভুট্টা ক্ষেতে অতিরিক্ত পোকার আক্রমণ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। বিশেষ করে সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের খামাতপাড়ার প্রায় প্রতিটি জমিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

 

কৃষকদের অভিযোগ, পরামর্শের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে নিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে কখনোই পাশে পাননি তারা। যে কারণে স্থানীয় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনে তিন থেকে চারবার কীটনাশক স্প্রে করেছেন। কিন্তু তাতে উপকার হয়নি।

 

খামাতপাড়ার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গতবার ভুট্টা খেতে যখন পোকার আক্রমণ হয়েছিল তখন একবার স্প্রে করেই পোকা মরেছে। কিন্তু এবার চার-পাঁচবার স্প্রে করেও পোকা মরছে না।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা এসে যে আমাদের ভুট্টা খেত দেখবে, আমাদের পরামর্শ দেবে তা তিনি কোনোদিন করেননি। মাঠপর্যায়ে তাকে কোনো দিন দেখা যায়নি। বাজারে যে কীটনাশক-সার-বীজের দাম তাতে করে আমাদের খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না। শুধু মোস্তাফিজুর নয়, তার মতো এই ইউনিয়নের অনেক কৃষকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। নষ্টের পথে এখানকার শতবিঘা জমির ভুট্টা ক্ষেত।

 

কৃষকরা বলছেন, দিনের আলোতে এই পোকার আক্রমণ কম। আক্রমণ শুরু হয় রাতে। ছোট গাছের গোড়া অথবা গছের কান্ড পর্যন্ত কেটে ফেলছে এই পোকা। এভাবে ভুট্টাক্ষেত নষ্ট হওয়ায় ফসল ঘরে তোলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক কৃষক। এই সমস্যার সমাধান না পেলে ক্ষতি পোশাতে বিকল্প আবাদের কথা জানান কৃষকরা।

 

কৃষক সিহাবুর রহমান শুভ বলেন, এই পোকা গাছের মূল কাণ্ডটা কেটে দেয় আর এই পোকাটা সন্ধ্যার পর বের হয়। স্থানীয় দোকান থেকে কীটনাশক নিয়ে এসে চার-পাঁচ বার স্প্রে করছি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এই কীটনাশক কিনতে কিনতে প্রচুর টাকা শেষ করছি কিন্তু উপকার হয়নি। আর কৃষি কর্মকর্তাদের তো পাওয়া যায় না, তাদের কোনো সুপরামর্শও পাইনি। আমাদের কাছে কেউ আসেও না আমাদের যে কি হবে বুঝতে পারছি না।

 

জিয়ারুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছি। গতবারও একই জমিতে আবাদ করেছিলাম, বিঘায় ৪০ মন ভুট্টা পাইছিলাম। আর এবার যে অবস্থা মনে হয় না ৫ মণ ভুট্টা পাব। পোকা সব শেষ করে দিচ্ছে।

 

কৃষক সুমন রহমান বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। পোকার এত আক্রমণ যে, কীটনাশক স্প্রে করে কাজ হচ্ছে না। এখন ভুট্টাগুলা তুলে ফেলে ধান আবাদ করা ছাড়া উপায় নেই।

 

পোকার আক্রমণের কথা স্বীকার করে নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমদ বলেন, আগে ভুট্টার জমিতে রোগবালাই কম হতো এজন্য কৃষকরা ভুট্টা বেশি করে আবাদ করতেন। ইদানিং যেহেতু বেশি আবাদ হচ্ছে আবার একই জমিতে পরপর কৃষকরা ভুট্টা আবাদ করছেন, এ কারণে ভুট্টায় পোকার আক্রমণটা বেড়েছে।

 

সেই জন্য কৃষকদের আমরা বীজ শোধন করে রোপণ করার পরামর্শ দিয়েছি। বিশেষ করে সিনজেনটা ফরতেনজা এই ওষুধটি বা এ জাতীয় ওষুধ দিয়ে বীজ শোধন করে রোপণ করলে চারা গজানোর সাথে সাথে যে কাটই পোকার আক্রমণ হয় সেটা কমে যায়। যেসব কৃষক বীজ শোধন করে রোপণ করেছেন তাদের ভুট্টা ক্ষেত ভালো আছে, যারা বীজ শোধন করেননি তারা এই আক্রমণে ভুগছেন।

 

তিনি বলেন, যাদের জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়েছে তারা কাটই পোকা দমনে যে ওষুধগুলো রয়েছে কার্যকর মাত্রায় অবশ্যই বিকেল বেলা স্প্রে করতে হবে। তাহলে আশা করছি কাজ হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছেন বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version