-->
শিরোনাম

সাভারে তীব্র গ্যাস সংকটে জ্বলছে না চুলা, ধুঁকছে শিল্প-কারখানাও

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাভারে তীব্র গ্যাস সংকটে জ্বলছে না চুলা, ধুঁকছে শিল্প-কারখানাও
সাভারের আবাসিক এলাকার বাসায় গ্যাসের টিমটিমে অবস্থা

শিল্প-অধ্যুষিত সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকেরা পোহাচ্ছেন দারুণ ভোগান্তি। আবাসিক গ্রাহকদের যেমন রান্নার জন্য খুঁজতে হচ্ছে ভিন্ন পন্থা তেমনি চড়া দামে বিকল্প জ্বালানি কিনে উৎপাদন ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার মালিকেরা।

 

এর বাইরে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও মিলছেনা জ্বালানি গ্যাস। গ্যাসের সংকটের কারণে এ অঞ্চলের অনেক এলাকার মানুষকে খাবারের জন্য হোটেলে লাইন দিতে দেখা যায়। রান্নার মাঝপথে গ্যাস চলে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে রাইসকুকার, ইন্ডাকশন কুকার ও স্টোভ ব্যবহার করেছেন অনেক গ্রাহক।

 

সরেজমিনে এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দিনব্যাপী মিলছেনা রান্নার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস। রাতের দিকে কিছুটা গ্যাস আসে তাই অনেকেই রাতের নির্দিষ্ট একটি সময়ে সেরে নিচ্ছেন সারাদিনের রান্না।

 

এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সোবাহানবাগ এলাকার বাসিন্দা শেখ শারমীন আক্তার বলেন, ‘সারাদিনই বাসায় গ্যাস থাকেনা। তাই সকালের নাশতা বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। আর সন্ধ্যার পর লাইনে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায় তখন বাধ্য হয়ে রাতে জেগেই সারাদিনের রান্না সেরে রাখি। আর সারাদিন সেসব রান্না করা ভাত-তরকারি ওভেনে গরম করে কোনমতে খাই।’

 

সাভার ১নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা জাহান বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে গ্যাসের এই টিমটিমে অবস্থা। শুধু আজকে না, প্রতিদিনই এমন। শুক্রবারেও রেহাই নেই। এক কাপ চায়ের পানিও ফুটছে না, বাকি রান্না তো বাদই দিলাম। কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নাই, কোন জবাবদিহিতা নাই। কোন পরিবর্তন নাই।’

 

এদিকে এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজারের মতো ছোটবড় শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) চাপের গ্যাস প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে তা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। কারখানা মালিকরা বলছেন এ চাপ সংকটের কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম। এতে তাদের পন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক।

 

এ বিষয়ে সাভারের উলাইল এলাকায় অবস্থিত আল মুসলিম গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আবু রায়হান বলেন, ‘প্রায় মাসখানেক যাবত আমাদের এই গ্যাস সংকট পোহাতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়। লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে আমদেরকে উৎপাদন চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আর এতে করে আমাদের প্রতিমাসে মাসে যেখানে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার ইউটিলিটি খরচ হতো সেটি এখন প্রায় ১০ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। অতিরিক্ত এই তিন কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের লাভের পরিমাণও কমে এসেছে অনেকটাই।’

 

এছাড়া এসব এলাকার সিএনজি স্টেশনগুলোতেও মিলছেনা কাক্সিক্ষত পরিমাণ গ্যাস। দিনের বেলায় লাইনে গ্যাসের চাপ (প্রেসার) কম থাকায় সারাদিনের যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে রাত ১১ টার পর থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভীড় করেন গ্যাস প্রত্যাশীরা।

 

হুমায়ূন নামের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ‘গতকাল সাভারের শিমুলতলা থেকে গাড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পথিমধ্যে সাভারের রেডিও কলোনী থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত চারটি সিএনজি পাম্পের একটিতেও গ্যাস পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে অকটেন ভরে গন্তব্যে পৌঁছেছি।’

 

এ ব্যাপারে ধামরাইয়ের এফ টু এফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. কিরন বলেন, ‘সারাদিনই পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছি না আমরা। গ্যাসের মূল লাইনে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিকভাবে ১৮ থেকে ২০ পিএসআইজি পাই। কিন্তু এখন আমরা সেখানে ৩ থেকে ৫ পিএসআইজি পাচ্ছি। তবে রাতের বেলায় ১২ থেকে ১৩ পাওয়া যায়।’

 

এ ব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. খাদেম উদ্দিন বলেন, ‘শীতের এই সময় গ্যাসের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। চাহিদা অনুপাতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই এ সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version