-->
শিরোনাম

ভুট্টা চাষে প্রবাস ফেরত যুবকের বাজিমাত খরচ বাদে পাবে ৬ লাখ টাকা

হোসেনপুর প্রতিনিধি
ভুট্টা চাষে প্রবাস ফেরত যুবকের বাজিমাত খরচ বাদে পাবে ৬ লাখ টাকা
ক্যাপশন : ভুট্টা খেত পরিচর্যায় রাসেল

ভাগ্য উন্নয়নের আশায় সৌদি আরবে চলে যান রাসেল। দুর্বিষহ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ফিরে আসেন দেশে । গ্রামে থেকেই কিছু একটা করবেন বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কী করা যায়, এ ব্যাপারে সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তিনি।

 

অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাপ-দাদার পৈতৃক পেশা কৃষিকাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবেন। কিন্তু তিনি সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে চান না। তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে লাভজনক চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য তিনি চাষাবাদ শেখার জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে শুরু করেন। দেশে এসে বাস্তবায়ন করতে উঠে পড়ে কাজ করতে থাকেন। পরামর্শ নেন কৃষি বিভাগের। একপর্যায়ে স্বপ্নের সফলতায় মুগ্ধ হন। এখন রাসেল অন্যকে পরামর্শ দেন বিদেশ নয়, দেশেই সমপরিমাণ শ্রম দিয়ে বৈদেশিক পর্যায়ের অর্থ উপার্জন সম্ভব। এর জন্য দরকার সুন্দর পরিকল্পনার সঙ্গে একাগ্রতা।

 

রাসেল প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা, দুই বিঘা জমিতে মরিচ, আলু চাষাবাদ শুরু করেন। ভুট্টা চাষে কম খরচ থাকায় ব্যাপক লাভের মুখ দেখেন তিনি। পরবর্তী বছরে ৪ একর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করেন। ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

 

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব দ্বীপেশ্বর গ্রামের রসুন আলীর ছেলে মোঃ রাসেল মিয়া। পরিবারে তিন বোন ৩ ভাই। পিতার সংসারের হাল ধরতে ২০০৫ সালে সৌদি আরবে যান। পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাস জীবনে নানা কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। অনেক টাকা ধারদেনা করে বিদেশে গেলেও আর্থিক অনটনের মধ্যেই থাকতে হতো বেশির ভাগ সময়। বিদেশে বসেই স্বপ্ন দেখেন দেশে কৃষি কাজ করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। ইউটিউব আর ইন্টারনেটে দেখতে থাকেন কৃষি প্রকল্পের নানা অনুষ্ঠান। প্রবাসে বসেই পরিকল্পনা করেন দেশে ফিরে কৃষি কাজ করার। ২০২১ সালের শেষদিকে দেশে ফিরে আসেন মোঃ রাসেল মিয়া। এ বছর চার একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। এই ভুট্টা চাষ করতে ১লাখ ৫০হাজার টাকা তার খরচ হয়েছে। বর্তমানে ভুট্টার প্রতি মন ১৩০০ টাকা। তিনি আশা করছেন, ৬ লক্ষ টাকার ভুট্টা বিক্রয় করতে পারবেন।

 

প্রবাস ফেরত যুবক মোঃ রাসেল মিয়ার ভুট্টা আবাদ দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ভুট্টা চাষে। হোসেনপুরের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাসেল বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে ভুট্টা চাষ করে লাভবান হয়েছে। আমরাও পরামর্শ নিতে এসেছি ভুট্টার ফলন কিভাবে বাড়ানো যায়? উপজেলার চরবিশ্বনাথপুর গ্রামের আব্দুল হক বলেন, রাসেল ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছে এমন খবর শুনে ছেলেদের পরামর্শে ভুট্টা খেত দেখতে এসেছি। রাসেল মিয়ার পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার কাছ থেকেই ভুট্টার বাম্পার ফলন বাড়ানোর পদ্ধতি জেনে চাষ শুরু করব।

 

রাসেল জানান, বিদেশ থেকে ফিরে বেকারত্ব ঘোচাতে কৃষিতে আত্মনিয়োগ দেন তিনি। প্রথম বছর ভুট্টা চাষে সামান্য লাভজনক হওয়ায় এখন ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করেছেন। কৃষি ফসলের রোগবালাই হলে তিনি কি করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার অনেকটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তাছাড়া ওষুধের দোকানে গিয়ে লক্ষণ গুলো বললেই ওষুধ দিয়ে দেয়। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকলে ভুট্টা খেত থেকে ছয় লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান কবির ভোরের আকাশকে বলেন, এ বছর আগাম ভুট্টা চাষে রাসেল চমকপদ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে ভুট্টার ব্যাপক ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version