-->
শিরোনাম

লৌহজাত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, কামার সম্প্রদায়ে চলছে দুর্দিন

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
লৌহজাত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, কামার সম্প্রদায়ে চলছে দুর্দিন
লোহার জিনিসপত্র তৈরি করছেন কামার সম্প্রদায়

প্রাচীন কাল থেকে লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কামার সম্প্রদায়ের লোকেরা তৈরী করে আসছে নানা ধরনের জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে লোহা শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ ও ক্রেতা স্বল্পতার কারণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় এ সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।

 

কর্মকাররা বলছেন, লোহা শিল্পের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ, ক্রেতা সংকট ও দিন দিন নিত্যপণ্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা এবং সাংসারিক ঘানি টানতে চরম বিপাকে তারা।

 

তাদের দাবি, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা, ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ পাওয়া গেলে তাদের এই পেশাকে টিকিয়ে রেখে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবেন।

 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদ্রশিল্পের আওতায় থাকা কামারদের ক্ষুদ্র কারখানায় হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দ আর হাপর দিয়ে কয়লার আগুনকে উস্কে তাতে লোহা গরম করে পিটিয়ে-পিটিয়ে বিভিন্ন আকারের লোহার জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে। আদি যুগ থেকে এগুলোর ব্যবহার বেশি থাকলেও কালের পরিবর্তনে লোকজন এখন এসব লোহার তৈরি পণ্য তেমন ব্যবহার করতে আগ্রহী নয়। যার ফলে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া বাজার, বাগগুজরা বাজার, বারবাকিয়া বাজার, আরবশা বাজার, সবুজ বাজার, মগনামা বাজার, কইড়া বাজার, কাজি বাজার, রুপালি বাজার, টইটং বাজার, মহুরীপাড়া বাজার, হাজী বাজার এবং আমিন বাজারে শতাধিক কর্মকারদের কারখানা ছিল। এ সব কারখানা থেকে তৈরিকৃত বিভিন্ন প্রকারের জিনিসপত্রগুলো দেশে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাওয়া হত। সেই সময়ে তাদের ব্যবসা ছিল জমজমাট। লৌহজাত শিল্পের এসব সংকটের কারণে পেশাদার কর্মকাররা তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। আর যারা এ পেশা ছাড়া কোনো কাজ পারে না তারাই এপেশায় জড়িত আছে।

 

পেকুয়া বাজারে কর্মকার সনজিত (৪০) বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে এ পেশায় আছি। আমাদের তৈরিকৃত জিনিস পত্রগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকারেরা নিয়ে যেত কিন্তু এখন পাইকারী তো দূরের কথা খুচরাও বিক্রি করা কষ্ট সাধ্য। বউ বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। আমাদের এ পেশা আজ বিলুপ্তির পথে। সরকার যদি একটু সুদৃষ্টি বা সহযোগিতা করলে আমাদের বাপ দাদার এই পেশাটা ধরে রাখতে পারতাম।

 

পেকুয়া বাজারের শিবাধন কর্মকার (৫০) বলেন, এ পেশায় কর্মরত থেকে সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি আরো বলেন লেখাপড়া করি নাই এবং অন্য কাজ পারিনা বিদায় এ কাজ করি। বর্তমানে আমাদের তৈরি দা, বঁটি, খুন্তি, কোদাল, কাস্তে, বেলচা, কুড়াল, কাটারি, নিরানি, কাঁচি ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করে দৈনিক ৪শ’ ৫শ’ টাকা করে মাঝে মধ্যে আরো কম ইনকাম হয়। এ টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে কোনরকম দিন পার করছি।

 

আরব শাহ বাজারের সংকর কর্মকার (৫৫) বলেন, বর্তমানে আমাদের এ কাজের তেমন চাহিদা নেই। কুরবানির ও রমজানে ঈদে সামনে আসলে কিছু কাজ হয় এবং ধান কাটার সময় কিছু কাজ হয়। তাছাড়া কাজ হয় না। সারা বছর অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।

 

টৈইটং বাজারের সুবাস কর্মকার(৩৮) বলেন, বাপদাদার আমল থেকে এ পেশায় জড়িত। অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। বর্তমানে আমাদের তৈরি দা, বঁটি, খুন্তি, কোদাল, কাস্তে, বেলচা, কুড়াল, কাটারি, ছেনি, নিরানি, কাঁচি ইত্যাদির চাহিদা খুব কম।

 

পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজার সমিতি সভাপতি মোঃ মিনহাজুল উদ্দীন বলেন, কামার শিল্প একটি প্রাচীন পেশা, যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। তারা পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে, কৃষিকাজে বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। এখন ঈদে চাঁদে দুই একমাস ছাড়া বাকি মাসগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। পেকুয়া বাজার থেকে অনেক কর্মকার চলেও গেছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version