-->
শিরোনাম
বরমীর হাট 

একদিনে সবজি বেচাকেনা হয় ৪২ হাজার কেজি

জাহিদুল ইসলাম বাবু, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
একদিনে সবজি বেচাকেনা হয় ৪২ হাজার কেজি
ট্রলার থেকে সবজি নামানো হচ্ছে

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে একদিনে কমপক্ষে ৪২ হাজার কেজি সবজি বেচাকেনা হয়। সপ্তাহের বুধবার এ বাজারের হাটের দিন। যত সবজি আমদানি হয় তার সবগুলো আসে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবোসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে।

 

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও এসব সবজি আমদানি হয়। হাটবার সবজি আমদানি ও বেচাকেনার সাথে প্রায় দুই’শ শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। চাষীরা চলতি সবজি মৌসুমে বেচাকেনায় বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানা যায়।

শীতকালীন সবজি টমেটো, আলু, বাঁধা কপি, শিম, কাঁচা কলা প্রভৃতির বিপুল সরবরাহ বরমী বাজারের প্রতি বুধবারের দৃশ্য। ইদানীং শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় স্ট্রবেরী, ব্রুকলীর চাষ হয়। বিদেশী এসব ফল ফসলের আমদানিও হয় বরমী বাজারে। গত বেশ কয়েকটি হাটে টমেটো এবং আলুর আমদানি ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। বাজারের সকল প্রকার সবজি বিষমুক্ত বলেও দাবী করেন সংশ্লিষ্টরা।

হাটবার ভোর ৫টা থেকেই সবজি সরবরাহ হতে থাকে। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৬টি ট্রলারে এসব পণ্য আসে। প্রতি ট্রলারে কমপক্ষে ১’শ খাঁচায় পণ্যগুলো ভর্তি থাকে। প্রতি খাঁচার গড় ওজন হয় ৭০ কেজি। সব মিলিয়ে ৪২ হাজার কেজি কাঁচা এসব সবজির সমারোহ ঘটে বরমী বাজারে। আশপাশের হাটগুলোর খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী মূল্যে এসব পণ্য কিনে নিয়ে যান।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক আব্দুস ছাত্তার বলেন, ২০ বছর যাবত কৃষি কাজ করছি। বরমী বাজারে ১৫ বছর প্রতি সপ্তাহে কাঁচা সবজি নিয়ে আসছি। বিক্রি করছি, জমি থেকে আবার নিয়ে আসছি। আমরা বরমী বাজারের আড়তে এ সবজি বিক্রি করি। অন্যান্য বছর থেকে এবছর বিক্রি ভাল হয়েছে। আমরা লাভবান হয়েছি। বাজার বিক্রি ভাল। শিমের খাঁচায় ৭৫ কেজি, আলু ৭০ কেজি, টমেটোর খাঁচায় ৮০ কেজি মাল ধরে।

 

বরমী বাজারের ব্যবসায়ী শামসুদ্দীন বলেন, আলু, টমেটো ট্রলার থেকে ডাঙ্গায় তুলি। শীতকালে বছরে দুই মাস বেশি কাজ করতে হয়। অন্যান্য সময় বাজারের ভেতর কাজ করি। আমার মতো দেড়’শ শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গফরগাঁয়ের টাঙ্গাবো এলাকার কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, আমরা কৃষি কাজ করি ২০ বছর যাবত। এবার উৎপাদন কম কিন্তু দাম ভালো হওয়ায় লাভবান হয়েছি। টমেটো বিক্রি করি তিন মাস। অন্যান্য সময় ঝিঙ্গা, করলা, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি করি। সারা বছর সবজি বিক্রি করি। ৮জন কৃষক একটি ট্রলার ভাড়া করি। প্রতি কেজিতে ১ টাকা করে পরিবহন ভাড়া ও শতকরা ৬ টাকা আড়ত খরচ পড়ে। প্রতি হাটে ৪/৫টি ট্রলার আসে বরমী বাজারে।

 

খুচরা বিক্রেতা মামুন সরকার বলেন, দেড়’শ শ্রমিক মালামাল উঠানোর কাজ করেন। দেড়মাস আগে ২০ টাকা কেজি দরে সবজি কিনতে হতো। এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় টমেটো কিনতে হয়।

 

বরমী বাজারের আড়তদার জালাল উদ্দিন বলেন, সপ্তাহে একদিন মাল বিক্রি করি। প্রতি বুধবারে সব মিলিয়ে লাখ টাকার মাল বিক্রি করি। এখানে যেসব মাল আসে সব মাল বিষমুক্ত।

 

 

সবজি শ্রমিক আল আমীন বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার, দেড় হাজার টাকা পাওয়া যায়। বরমীর হাটে শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চালাতে হয়।

 

 

বাজারের বাসিন্দা হুমায়ুন কবীর (জাপানী) বলেন, বরমী বাজারের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এটি গাজীপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। মোঘল আমল থেকে এ বাজারের প্রসার ঘটেছে। প্রতি হাটের দিনে শীতলক্ষ্যার পাড়ে জমে উঠে সবজির আড়ত। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ করে ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও পাগলা এলাকা থেকে প্রায় অর্ধ টন সবজি আসে বরমীর হাটবার বুধবারে। এ বাজারে ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পাইকারী বেচাকেনা হয়। বাজারের দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দুরান্ত থেকে অনেক লোক আসেন।

 

রাসেল এন্টারপ্রাইজের মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবো এলাকা থেকে সবজিগুলো বেশি আসে। প্রতি বুধবার হাটের দিনে কমপক্ষে ৬টি ট্রলারে এসব পণ্য আসে। প্রতি ট্রলারে ১’শ খাঁচা আসে। প্রতি খাঁচায় গড়ে ৭০ কেজি পণ্য ধারণ করা হয়। বাজারে বেশিরভাগ সময় ময়লা-আবর্জনা থাকে। প্রশাসন পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ও যানজটের ব্যাপারে নজরদারি করলে বাইরে থেকে পাইকাররা আসতো। এতে বেচাকেনা ও দাম বেশি পাওয়া যেত।

 

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version