-->

উষ্ণতার খোঁজে লন্ড্রি বাজারে ঢল

দিনাজপুর প্রতিনিধি
উষ্ণতার খোঁজে লন্ড্রি বাজারে ঢল
ক্যাপশন : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে লন্ড্রি বাজারে ক্রেতাদের ভিড়

শীতে কাবু মানুষের পদচারণায় মুখরিত লন্ড্রি বাজার। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে ‘লন্ড্রি বাজার খ্যাত’ এই হকার্স মার্কেট এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

 

বাজারে প্রতি পিস গরম কাপড় ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ দরে হাকডাক দিয়ে বিক্রি হয়। শীতের প্রকোপ বাড়তেই জমে উঠেছে শীতের পুরোনো পোশাক বেচাকেনা এই বাজারে। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিক্রিও হচ্ছে হরদম। চাহিদা থাকায় শীতের পোশাকের দাম এবার বেড়েছে। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করতে বেশিরভাগ ক্রেতাই পুরোনো কাপড়ের লন্ড্রি বাজার অর্থাৎ হকার্স মার্কেটেই বেশি ঝুঁকছে। কিনছে পছন্দের শীতবস্ত্র। বিক্রি বেশি হওয়ায় খুশি দোকানিরাও।

 

তীব্র শীতে কাঁপছে দিনাজপুর। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। ফলে বেড়েছে পুরোনো গরম কাপড়েরও কদর। শীত থেকে রক্ষা পেতে নিজের কিংবা পরিবারের সদস্য ছাড়াও বাড়ির গবাদিপশু গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়ালের জন্যও কাপড় কিনতে ভিড় করছে অনেকে।

 

চিরিরবন্দরের আন্ধারমুহা এলাকা থেকে কাপড় কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই কাচারিত একটু কাজ ছিল। শেষ করি চলি আনু কাপড়ের বাজারত। যে ঠান্ডা পইছে। মোর মা আর দুইটা ছোইলের জন্যে স্যুয়েটার কিনিম। দেখি পছন্দ করেছো। মেলায় দাম চাহেছে।’

 

বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর থেকে আসা আকলিম খাতুন বলেন, ‘তিনজন একসাথে আইছি, গরম কাপড় কিনিবার বাবত। আত্মীয়র বাড়িত বেড়াবা আইছনো। যাবার বেলায় এন্না ঘুরি যাছি। যদি ভালায় ভালায় কিছু পাওয়া যায়। দেখিনো। দুটা কিনিওছি। আরও দেখেছি। এবার মেল্লায় দাম। তারপরও কম দামেরলা বাছি বাছি নেছি।’

 

দিনাজপুর হকার মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার গাইডের দাম খুবই বেশি। তারপরও বেশি টাকায় গাইড কিনে পোষাচ্ছে না। অনেক ছেঁড়া-ফাটা বের হচ্ছে। যা হাক দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে কেউ নিজের জন্য অথবা পরিবারের সদস্যদের জন্য। আবার কেউ নিচ্ছে গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়ালকে পরানোর জন্য।’

 

শুধু হকার্স মার্কেট নয়, রেল ঘুমটি থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সড়ক পর্যন্ত শীতের গরম পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ফুটপাথের ওইসব দোকানেও।

 

বিভিন্ন সাইজের সোয়েটার, জ্যাকেট, কানটুপি, মাফলার, শাল, ট্রাউজার, ফুলহাতা গেঞ্জি, হুডিসহ বিভিন্ন শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এসব ফুটপাথেও। সাইজ অনুযায়ী দামও আলাদা। একশ-দেড়শ’ টাকা থেকে শুরু করে আটশ টাকা দামের পোশাক মিলছে এসব দোকানে। এ ছাড়া হাতমোজা, কানটুপি ও ছোটখাটো শীতের পোশাক মিলছে ১০০ টাকার ভেতরেই।

 

ফুটপাথের ক্রেতা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের ক্রয়সীমায় মোটামুটি সব রকম পোশাকই ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে। শপিং মলগুলোতে কেনাকাটার চেয়ে ফুটপাথে কেনাকাটা ভালো ও সাশ্রয়ী।’

 

শহরের মালদহপট্টি থেকে শীতের কাপড় কিনতে আসা সবিতা বলেন, ‘স্বামী সামান্য দিনমজুরের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালানোই মুশকিল। যে শীত তাতে শীতের কাপড় না হলেই নয়। এখানে কম টাকায় পাওয়া যায়, তাই এসেছি।’

 

দোকানদার রহমত আলী বলেন, ‘প্রচণ্ড শীত আসায় মানুষ কাপড় কিনতে আসছে। কিছুটা ভালো ব্যবসা হচ্ছে। তবে ক্রেতারা কেনার থেকে অকে কম দাম বলছে। আমাদের সারা বছর এখানে বেচাকেনা হয় না তেমন একটা, শীতের দুই থেকে তিন মাস একটু ভালো বেচাকেনা হয়। তা দিয়ে আমরা সারা বছর চলি।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version