ধানের উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে সিরাজগঞ্জে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের আবাদে নতুন সম্ভবনা দেখা দিচ্ছে। বীজতলা তৈরী করা হয়েছে প্লাস্টিকের ট্রে-তে। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে লাগানো হবে ধানের বীজ। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে।
এছাড়া ধান কাটা, মাড়াই কাজে ব্যবহার করা হবে কৃষি যন্ত্র। এতে ধানের উৎপাদন খরচ অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে। এতে কৃষক অধিক লাভবান হবে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলার ৩০০ বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হবে। এ দুটি উপজেলার কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে এ পাইলট স্কীমের কার্যক্রম মনিটরিং করছে কৃষি বিভাগ। কার্যক্রম সফল হলে জেলার কৃষি খাত নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে।
সমলয় পদ্ধতিতে প্রতিটি ব্লকের আওতায় ১৫০ বিগা জমিতে বোরো চাষের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকের জমি এবং সেচের খরচ বাদে ধানের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে সমুদয় ব্যয় বহন করবে সরকার।
এ মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। এজন্য বীজ রোপণ করা হয়েছে ১২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে 'সমলয়' পদ্ধতিতে ৩০০ বিঘা জমিতে ধানের বীজ রোপন করা হবে।
কৃষি অফিস আরো জানায়, ধানের উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এছাড়া ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, অতিরিক্ত খরচ রোধ ও সময় অপচয়রোধ করা সম্ভব। সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সদর ও তাড়াশ উপজেলায় ৩০০ বিঘা জমিতে 'সমলয়' পদ্ধতিতে ধানের বীজ রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য প্লাস্টিকের ট্রে-তে ধানের বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। শীতে চারার যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় বীজতলা।
সম্প্রতি সদর উপজেলার ডুমুর ব্লকে ১৫০ বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ফলে সিরাজগঞ্জে কৃষিখাতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলার ডুমুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম শেখ ভোরের আকাশকে বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষ এর আগে কোন দিন করিনি। জমিতে বীজতলা তৈরী করেছি কখনও আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ট্রে-তে ধানের চারা উৎপাদন করা হয়নি। সব কিছু নতুন মনে হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিতে হাতের কোন কাজ নেই। সব কিছু হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। সার-বীজ সব কিছু দিচ্ছে সরকার। এবছর আমি দেড় বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে রোবো আবাদ করার জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। ফলন ভালো হলে আগামী বছর আরো অধিক পরিমান জমিতে চাষাবাদ করবো।
একই গ্রামের কৃষক আবু তালহা ভোরের আকাশকে বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে ধানচাষে আমি ভীষণ খুশি। উৎপাদন খরচ কমেছে অর্ধেক। আগে বীজতলা তৈরী করে জমিতে রোপন করতে সময় লাগতো দু-মাস। এখন প্লাস্টিকের ট্রে-তে ধানের চারা উৎপাদন হচ্ছে ২০-২৫ দিনে। এতে সময় ও খরচ কম লাগছে। এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়লে কৃষক লাভবান হবেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত ভোরের আকাশকে বলেন, 'সমলয়' পদ্ধতিতে ধান চাষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ধানের উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, ধান কাটা, মাড়াই সবই হবে যন্ত্রের মাধ্যমে। স্বাভাবিক ভাবে এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হতো ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এখন যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটতে খরচ হবে ১৫০০-২০০০ টাকা। আর এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করতে লাগে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোপন করতে লাগবে ৫০০-৬০০ টাকা।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে সময় ও উৎপাদন খরচ দুটোই কমবে। পাশাপাশি লাভবান হবে কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর ভোরের আকাশকে বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে "সমলয়" চাষ। এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এই চাষ সম্পর্কে জানাতে জেলা সদর ও তাড়াশে ৩০০ বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করা হবে।
এজন্য বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট দূর হবে। ধান রোপন করা, ধান কাটা, মাড়াই সব কিছু হবে যন্ত্রের সাহায্যে। এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে উৎপাদন খরচ কম হবে। আশা করছি ভালো ফল পাওয়া যাবে। এতে লাভবান হবে কৃষক।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য