-->
শিরোনাম
কালভার্টের মুখ বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণ

জলাবদ্ধতায় হাজার একর জমির ফসল নষ্টের আশঙ্কা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জলাবদ্ধতায় হাজার একর জমির ফসল নষ্টের আশঙ্কা
করিমপুর-পাঁচগ্রাম সড়কে এভাবে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোস্তশা মোড় এলাকায় একটি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিনদুপুরে স্থায়ী পাকা বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন বদরুজ্জামান নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে করে বর্ষা মৌসুমে ফসলের মাঠের পানি সরতে না পারলে আশপাশের কয়েক হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

 

শিগগিরই কাজ বন্ধ করে কালভার্টের মুখ খোলার ব্যবস্থা না করলে আগামী বর্ষা মৌসুমের দুর্গতি স্থানীয়দের ঘাড়ে চেপে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

 

এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন কৃষক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করলেও কোনো কাজ হয়নি। বন্ধ হওয়াতো দূরের কথা, চেয়ারম্যানকে জানানোর পর উল্টো সেখানে কাজ আরও দ্রুতগতিতে চলছে।

 

কালাই উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে উপজেলার পাঁচগ্রাম, মাদারপুর, এলতা ও ইমামপুর গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছিল। এ সমস্যা দূর করতে এলাকার কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করিমপুর-পাঁচগ্রাম সড়কে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ একটি কালভার্ট নির্মাণ করেন।

 

এরপর থেকে বর্ষা মৌসুমের জমে থাকা পানি ওই কালভার্ট হয়ে দ্রুত নেমে যায় স্থানীয় হারাবতী খালে। কয়েক মাস আগে কালভার্টের উত্তর পাশের মুখ বন্ধ করে এর কোল ঘেঁষে স্থায়ী পাকা বসতবাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন পার্শ্ববর্তী বাদাউচ্চ গ্রামের প্রভাবশালী বদরুজ্জামান আকন্দ। এতে কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে আবারও বৃষ্টির পানি জমে মাঠের ফসল তলিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেল।

 

পাঁচগ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে তারা স্থানীয় জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়াকে বিষয়টি অবগত করেছেন; কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কালভার্টের বন্ধ মুখ খোলার বা বাড়ির কাজ বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নেননি।’

 

বেগুনগ্রামের কৃষক তাহের আলী বলেন, ‘যেভাবে কালভার্টের মুখ বন্ধ করেছে তাতে মনে হচ্ছে আর কোনো দিনও এই কালভার্ট দিয়ে পানি চলাচল করবে না। ফলে তিন ফসলি জমিতে ধান, আলুসহ কৃষি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে প্রায়ই ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের অনেকেই চলাচল করেন। তারা দেখেও কেন না দেখার ভান করছেন তা বুঝতে পারছি না।’

জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘কৃষকরা আমাকে বলেছে, আমি ওই বাড়ির মালিককে নিষেধও করেছি। তারপরও বাড়ির মালিক কাজ চলমান রেখেছেন। আমি বিষয়টি ইউএনওকে জানাব।’

কালভার্টের মুখ বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বদরুজ্জামান আকন্দ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মাঠে পানি নেই, তাই মুখ বন্ধ করে দিয়েছি। বর্ষার আগেই আবার খুলে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বর্ষা মৌসুমের জমে থাকা পানি আমার বাড়ির ভেতর দিয়েই পার হয়ে যাবে। তাতে আপনার কী?’

কালাই ইউএনও মো. আবুল হায়াত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি। আর আমি জানিও না। আপনার কাছ থেকে জানলাম এখন। খোঁজ নিয়ে দ্রুত কালভার্টের মুখ খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version