সীতাকুণ্ডে এবার শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি জমির আলে কিংবা পুকুর-খালের পাড়েও শিম আর শিম। শিমের রাজ্যে দখলে রয়েছে বেড়িবাঁধ আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশও। স্থানীয় কাঁচা বাজার এখন অনেকটা পরিপক্ক সবুজ শিম আর বিচির দখলে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবার শিম চাষে প্রচুর লাভবান হবেন উপজেলার চাষিরা। লইট্যা, বাইট্যা, পুঁটি ও ছুরি এ ৪ জাতের শিমের চাষ করেন চাষিরা। তবে লইট্যা শিমের ফলন অনেকটা বেশি হয়ে থাকে।
কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, উপজেলায় ৫ হাজারের বেশি চাষি শিম চাষ করেন। সর্বাধিক শিম উৎপাদন হয় পৌরসদরস্থ উত্তরে নুনাছড়া থেকে দক্ষিণে ফকিরহাট পর্যন্ত। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন খেতের শিম তুলে বিক্রির জন্য হাট-বাজারে নিয়ে আসছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার সীতাকুণ্ডে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার প্রায় ৯০ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু‘ধার, বসত বাড়ির আঙ্গিনা ও পাহাড়ি এলাকা’সহ শিম চাষ করে আরো ৫ হাজার মে. টনের অধিক উৎপাদন হয়। যার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।
পৌরসদরের ৬নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মহাদেবপুরস্থ হাসান গোমস্তাপাড়া এলাকার চাষি মো. সফিউল আলম জানান, অক্টোবর মাসের শুরুতেই দু‘একর উচু জমিতে শিমের বীজ বপণ করেছিলেন তিনি। মাত্র ৪০ দিনের মাথায় শিম পরিপক্ক হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা কাঁচা শিম বাজারে বিক্রি করে দারুন খুশি এ চাষি।
তিনি আরো বলেন, শিম চাষ করে আমরা প্রতিবছর লাভবান হচ্ছি।
একই এলাকার পার্শ্ববর্তী জমির চাষি মো. আলমগীর বোরহান বলেন, শিম চাষে মাত্র ৩ মাস সময় দিয়ে ভালো আয় করা সম্ভব। তার দু’একর জমিতে প্রতিটি শিম গাছে বাঁশের খুঁটি দেয়া, কীটনাশক, ঔষধ ও লেবার খরচ বাদে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মত মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, মৌসুমের শুরুতে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শিম গাছের অসংখ্য ফুল ঝরে পড়ে গেছে। তাতে সবুজ শিমের উপর কালচে এক ধরণের দাগ পড়ে গেছে। তা না হলে এবার ফলন আরো ভালো হত।
সীতাকুণ্ড কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন রাজু বলেন, এখানকার মাটি শিম চাষের জন্য দারুন উপযোগী। ‘কাত্তি কোটা’ আর ‘ছুরি’ এ দু‘জাতের শিমই বেশি বিক্রি হয় সীতাকুণ্ডে। একটি লালচে, অন্যটি সবুজ-সাদা লম্বাটে। সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত শিম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাল্য বয়সে দেখেছি শিম লাগানো হতো বসত বাড়ির আঙ্গিনায়। আর জমিতে হত ধান চাষ। এখন শিমের চাহিদা ও ফলন বেড়েছে। তাই জমি, ভিটা, রাস্তা, খাল কিছুই বাদ নেই। আর এলাকায় শিমের নানা পদ ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে সবজি, ভর্তা, ভাজি, খাইস্যা (বিচি), ডাল, শুকনো বিচি পোড়া ইত্যাদি। চাহিদা বেশি হওয়ায় যেখানেই সুযোগ মিলছে সেখানেই শিম গাছ লাগাচ্ছেন অনায়াসে। তবে সমস্যা হচ্ছে, যত বেশি চাষাবাদ হচ্ছে শিমগাছে আসছে নতুন নতুন রোগব্যাধিও। অনেক সময় ঔষধেও কাজ করছে না।
সার-কীটনাশক বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নিম্নমান ও নকল কীটনাশকে বাজার সয়লাব হয়েছে। এটা যেমন সত্য, তেমনি চাষিদের সঠিক মাত্রাজ্ঞান না থাকায় ঔষধের প্রয়োগও ঠিক মত হচ্ছে না। অনেক সময় একটি ঔষধ প্রয়োগের পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করে আরেকটি ঔষধ প্রয়োগের ঘটনাও রয়েছে। যা ফসলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর।
সীতাকুণ্ড কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী ফয়সাল বাণিজ্যালয় এর স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান (শাহিন) বলেন, শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড। এখানকার শিমের রং, রূপ আর স্বাদ বরাবরই আলাদা। দেশজুড়ে রয়েছে এখানকার শিমের আলাদা কদর। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শিম রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, এখানের মাটি শিম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তবে কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শিমের গুণাগুণ কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। শিম চাষিদের এ ব্যাপারে কৃষিবিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য