-->
শিরোনাম

হরিজন-পৌরসভা বিরোধ, এলাকায় ময়লার ভাগাড়

যশোর প্রতিনিধি
হরিজন-পৌরসভা বিরোধ, এলাকায় ময়লার ভাগাড়
হরিজন পল্লীর চারদিনের কর্মবিরতিতে ময়লায় সয়লাব পৌরএলাকা

যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুপক্ষই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। হরিজন পল্লীর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবিতে তারা গত তিনদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেছিল। আর পৌর কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়োগের কথা জানিয়ে বলেছে, হরিজন পল্লীর বিদ্যুৎ বিল বাসিন্দাদেরই পরিশোধ করতে হবে। দুপক্ষের কঠোর অবস্থানের ফলে পৌর নাগরিকরা পড়েছেন বিপাকে। আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় পৌর এলাকা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দ্রুত সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন পৌরবাসী।

বুধবার দুপুরে ৪র্থ দিনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা ঝাঁড়ু মিছিল করেছিলেন। টানা চার দিনের এ আন্দোলনে বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রতিস্থাপনপূর্বক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জোর দাবি জানান তারা। এ সময় হরিজন পল্লীর কয়েকশ বাসিন্দা সড়ক অবরোধ করে মেয়রের পদত্যাগ দাবি করেও স্লোগান দেন।

আন্দোলনরতরা জানান, যশোর পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে ৫ শতাধিক হরিজন কাজ করে থাকেন। এরা শহরের বড় বাজার, রেলবাজার ও তালতলা এলাকায় বসবাস করেন। পূর্বপুরুষদের পেশা হিসাবে তারা পৌরসভায় পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ করে আসছেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, সবকিছুর উন্নতি হলেও তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা তারা পাননা। পৌরসভা থেকে জায়গা দিলেও ঘর করে দেয়নি। তাদের পূর্বপুরুষরা কখনও বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। পৌরসভা বিদ্যুৎ বিলের ব্যয়ভার বহন করত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় ৪ ফেব্রুয়ারি রেলস্টেশন হরিজন কলোনীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ঘটনার পর আন্দোলনে নামেন তারা। তিনদিন ধরে তাদের কাজ বন্ধ রাখেন। বুধবার ৪র্থ দিনের মত কাজ বন্ধ করে তারা আন্দোলন চালিয়েছিলেন।

হরিজন নেতা মতিলাল বলেন, এখনও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে পৌর মেয়র কোনো আলোচনা করেননি। তাদের দাবি না মেনে নিলে তারা কাজ করবেন না। কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার বলেন, বর্তমান মেয়র আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই রেল স্টেশন এলাকার হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ এর লাইন বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। তার প্রতিবাদে আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পৌরসভার সকল পরিচ্ছন্নের কাজ বন্ধ রেখেছি। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতিসহ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এদিকে, তিনদিন ধরে আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় গোটা শহর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ রেখেছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এতে বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তুপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সাধারণ পথচারীরা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাচল করতে পারছেন না।

শহরের রেলগেট তেতুলতলা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম হোসেন বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় পশু-পাখিতে এসব ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও কয়েকজন জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দ্বন্দ্বের কারণে কেন তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা তো নিয়মিত পৌরসভার কর পরিশোধ করে আসছেন।

এদিকে বুধবার বিকেলে এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ। তিনি বলেন, আমরা সব কাউন্সিলররা মিলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা নিজেরা কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ডাস্টবিনগুলো পরিষ্কার করাবো। আমরা নাগরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার আমরা সেটা করব।

পৌর মেয়র আরও বলেন, যশোরের প্রেক্ষাপটে এখন আর হরিজনদের দরকার হয় না। তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তাদের বেতন বাড়িয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু পৌরসভার উন্নয়নের টাকা দিয়ে তাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পৌর কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে দেবে। কিন্তু এরপর থেকে তাদের বিদ্যুৎ বিল তাদেরকেই দিতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version