মাদারীপুর জেলার শিবচরের কৃতি সন্তান, গোলাম মোস্তফা আকন্দ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’ রক্ষার দাবিতে যখন উত্তাল রাজধানীসহ সারা দেশের রাজপথ। ঠিক তখনি তিনি এই আন্দোলনের সপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন ফরিদপুর জেলার বর্তমান মাদারীপুর জেলার শিবচরে বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন গোলাম মস্তফা রতন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন একজন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকটি জেলা ছাত্রদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেন। তিনি তখন বরিশাল বিএম কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র। মুক্তিকামী, সংগ্রামী মনোভাবের অধিকারী গোলাম মোস্তফা মাদারীপুর থেকে সে সময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-তরুণ নিয়ে মাদারীপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছান ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে। সদরঘাট থেকে মিছিল নিয়ে পৌঁছান ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে। একাত্মতা ঘোষণা করেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে।
তবে গোলাম মোস্তফার জীবদ্দশায় পাননি কোন রাষ্ট্রীয় খেতাব। পাননি কোন পুরস্কার। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক ভাগ্যে জুটলে শান্তি পেতেন গোলাম মোস্তফা আকন্দ। ২০০৮ সালে ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে যায়। প্রায় ১২ বছর ধরে শয্যাশায়ী এই ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আকন্দ’র আকুতি ছিলো রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননার। বুক ভরা আক্ষেপ নিয়ে অবশেষে তিনি ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। গত দেড় বছর আগে তার স্ত্রী লাইলি বেগমও মারা যায়।
শনিবার সরেজমিনে শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চর রামরায়ের কান্দি গ্রামে তার বাড়িতে গেলে কথা হয় তার সন্তানদের সাথে। পরিবারের সকলের দাবী একটুখানি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।
মাদারীপুরের ভাষা সংগ্রামী গোলাম মোস্তফা রতনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও মেলেনি। ফলে হতাশা বিরাজ করছে তার পরিবারসহ জেলাবাসীর মাঝে। এদিকে, ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও, পটুয়াখালীর ভাষা সৈনিকরা সরকারের কোন সহযোগিতা না পাওয়ায়, চরম আক্ষেপ আর হতাশা তাদের পরিবারের মাঝে। শুধু জেলায় শহীদ স্মৃতি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
শিবচর ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমিতো নতুন এসেছি শিবচরে। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে তারপরে আপনাদের জানাতে পারবো। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা মহান এ ভাষা সৈনিক যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পান।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য