-->
শিরোনাম
‘সুখী মানুষ’ এনজিও

কবুতর, হাঁস ও মুরগীর ঘরে শিশুদের ক্লাস

বাগেরহাট প্রতিনিধি
কবুতর, হাঁস ও মুরগীর ঘরে শিশুদের ক্লাস
হাঁস-মুরগীর ঘরকে শিশুদের শ্রেণীকক্ষ বানানো হয়েছে

এবার গোয়াল ঘর ছেড়ে কবুতর, হাঁস ও মুরগীর ঘরে শিশুদের ক্লাস করাচ্ছেন এনজিও সুখী মানুষ। পারিবারিক নানা প্রতিকূলতার কারণে যে সব শিশু শৈশবেই স্কুল পরিত্যাগ করেছে, লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের লেখাপড়া শেখানোর যে প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সদিচ্ছায় চালু করা হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বাগেরহাট জেলায়। ওই শিশু শিক্ষা প্রকল্পের প্রায় ১২ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে ‘সুখী মানুষ’ নামের একটি বেসরকারী সংস্থার বিরুদ্ধে।

বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কাঠিপাড়াগ্রামের শিখন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে একই ঘরের মধ্যে তিনটি ভাগ করে এক পাশে হাঁস, এক পাশে শিশুরা পড়ছে, মাঝখানে মুরগী আর ঘরের মাঁচায় কবুতরের বসবাস। এ বিষয় জানতে চাইলে ক্ষেপে যান শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক দিপালী। ঘর ভাড়া নিয়ে আলাদা ক্লাস করানোর কথা থাকলেও দেখা যায় ঘরের বারান্দা ভাড়া নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন এনজিও সুখী মানুষ।

সুখী মানুষ এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যাংক জালিয়াতি, সহযোগি এনজিওদের পাওনা অর্থ বুঝিয়ে না দেওয়া, স্কুল শিক্ষক, উপজেলা ম্যানেজার, সুপারভাইজার নিয়োগে নগদ অর্থ গ্রহণ, বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাংক থেকে ক্যাশ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা, বেতন না দিয়ে হুমকি প্রদান, শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস, বই, খাতা, পেন্সিল, শ্লেটসহ বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা সরঞ্জাম যথাযথভাবে প্রদান না করে সেই টাকা তুলে আত্মসাৎ করা, শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বকেয়া রেখে শিক্ষকদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষিকা সুমি আক্তার ও পলি আক্তার সহ একাধিক শিক্ষিকারা জানান, প্রকল্পের শুরুর পর জরিপ থেকে শুরু করে ১২ মাস ক্লাস করানোর পর আমাদের কোন বেতন-ভাতা, শিখন কেন্দ্র ভাড়া না দিয়েই আমাদের চাকুরীচ্যুত করেছে সুখী মানুষ এনজিও।

৪ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারি পরিচালক, মহাপরিচালক বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি, কিভাবে বাগেরহাটে এই শিশু শিক্ষা প্রকল্পটি কার্যকর হয়নি এবং কিভাবে চরম অসহযোগিতা করেছে সেই অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। এনজিওটির এই প্রকল্পে কাজ করার কেনো সক্ষমতা নেই বলেও তিনি ওই চিঠিতে মন্তব্য করেছেন।

বাগেরহাটে এই প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে একাধিক পত্র পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও কে বা কারা এই সুখী মানুষ এনজিওকে প্রকল্পে কাজ দিয়েছেন এবং নতুন করে এই প্রকল্পের কাজে এনজিওটিকে নবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৩ মিনিটে সুখী মানুষ এনজিওর নির্বাহী পরিচালক নাফিজা আফরোজ বর্ণকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি।

 

তবে সুখী মানুষ এর প্রকল্প পরিচালক ও সুখী মানুষ এনজিওর নির্বাহী পরিচালক নাফিজা আফরোজ বর্ণ এর আপন ভাই শেখ সোহেল আহম্মেদ রাতে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, সুখী মানুষের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট আমাদেরকে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফ্লোর বিক্রি ও ব্যাংকের কাছে ভাড়ার অগ্রীম টাকা দিয়ে এফডিআর করা হয়েছে।

এবিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, এদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে এখানকার সহকারী পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। যদি এধরনের কোন বিষয় থাকে তবে আমি সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version