-->

ঘুষ নিয়েও চাকরি না দেওয়ায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ঘুষ নিয়েও চাকরি না দেওয়ায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গোন্তা আলিম মাদরাসায় ৬ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও আয়া পদে চাকরি না পেয়ে অধ্যক্ষ টি আর আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন চাকরি প্রার্থী ফাতেমা খাতুন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের পেশকার মুনতাসীন মামুন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চাকরি প্রার্থী ফাতেমা খাতুন তাড়াশ সহকারী জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

 

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার গোন্তা আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৭ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আয়া পদে যথানিয়মে আবেদন করেন ফাতেমা খাতুন। পরে ফাতেমা খাতুনের কাছ থেকে তালম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামানের উপস্থিতিতে চাকরি দেওয়ার শর্তে মাদরাসার উন্নয়নের কথা বলে অধ্যক্ষ টি আর আব্দুল মান্নান ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তী ২১ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু একই পদে একাধিক প্রার্থীর কাছে থেকে অধ্যক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগে নিয়োগের দিন মাদরাসায় বিক্ষোভ করেন দুই প্রার্থী।

 

এমনকি নিয়োগ পরীক্ষার দিনে নিয়োগ কমিটির সামনেই আয়া পদে এক প্রার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যার চেষ্টা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে এক প্রার্থী কিটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ আবু নঈম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে চলে যান।

 

এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মাদরাসার অধ্যক্ষ গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তন করে তার মনোনীত প্রার্থীদের চূড়ান্ত করে নিয়োগ সম্পন্ন করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আয়া পদে প্রার্থী ফাতেমার ৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকার ফেরত দেন অধ্যক্ষ। বাকি ৪ লাখ টাকা চাইলে অধ্যক্ষ অস্বীকৃতি জানান। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন ফাতেমা খাতুন।

 

শুধু আয়া পদে নয়। বাকি তিনটি পদে (গোন্তা আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী) পদে গোপনে নিয়োগ দেয় মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ এনে তাড়াশ ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন চার প্রার্থী। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত চলাকালে চারটি পদে চার প্রার্থী আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

 

ফাতেমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তালম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামানের উপস্থিতিতে চাকরি দেওয়ার শর্তে মাদরাসার উন্নয়নের কথা বলে অধ্যক্ষ আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। টাকা নেয়ার সেই ভিডিও আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

 

তবে ফাতেমা খাতুনের এই অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত গোন্তা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ টি আর আব্দুল মান্নান বলেন, নিয়োগ বোর্ড ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির নির্দেশে চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো টাকা লেনদেন হয়নি। এটি সম্পূর্ণ্য মিথ্যা অভিযোগ। চাকরি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করা হয়েছে।

 

তালম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামান বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান আমার উপস্থিতিতে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে। এসময় ইউপি সদস্য ইসহাক উপস্থিত ছিলেন। এখন অধ্যক্ষ বলছেন ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ফাতেমার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। অধ্যক্ষ যা বলছেন তা মিথ্যা। তিনি ৬ লাখ টাকাই নিয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version