-->
শিরোনাম

দুই ইউনিয়নের একটি মাত্র পাকা সড়ক ধ্বংসের পথে

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর
দুই ইউনিয়নের একটি মাত্র পাকা সড়ক ধ্বংসের পথে
ক্যাপশন: নিয়ম অমান্য করে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে

দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার ৫ নং এবং ৬ নং ইউপির পর্মেশপুর ও গড়নূরপুর মৌজায় সন্ধিস্থল ঢেপা নদীর। দশ মাইল থেকে পশ্চিমে এই স্থানে নদীর উপর রয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। দুইপারের মানুষদের পারাপার হওয়ার জন্য কাহারোল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা এ পথে যাতায়াত করেন। আর ঢেপা নদীটি এই পথ দিয়েই মিলিত হয়েছে পূর্নভবা নদীর সাথে। এই স্থানে নদীর তীরে ৩০০ পরিবার বসবাস করে। আর এই দুইটি ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি মাত্র পাকা সড়ক সেটিও ধ্বংসের পথে। বন্যা হলে নদীর পাশে বসবাসরত গ্রামবাসীরা পানিতে নিমজ্জিত হন।

 

কিন্তু নদীর বাধ থাকায় গেল বছরে পানিতে কোনো বাড়ি/ঘর ডুবে যায়নি। আর এখানেই একটি বালু মহাল রয়েছে। যেটি নিয়েছেন ঠিকাদার রাকিবুল ওয়ারিশ। তারা ভেকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন আবার মাটিও খুড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ডা¤প ট্রাক দিয়ে। শুধু তাই নয় শিডিউলে বেঁধে দেওয়া নিয়মকে অমান্য করে প্রায় ১০ ফিট নিচে খনন করে বালু ও মাটি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। এত গভীর থেকে মাটি কাটার ফলে নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে।

 

এভাবে খনন চলতে থাকলে চরম ক্ষতিসাধন হতে পারে। যেকোনো সময় নদী রক্ষা বাঁধের রাস্তা ধসে যেতে পারে। পানিতে প্লাবিত হওয়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। বারো চাকার ডা¤প ট্রাক একটি ভারি যানবাহন। সেটি যে পথ দিয়ে যায় সেখানেই খাল হয়ে যাচ্ছে। পাকা সড়ক দেবে গিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ভেঙ্গেছে একটি কালভার্টও। অনেক কষ্টে মানুষেরা চলাচল করছে। আরোও একটি ছোট ও বড় কালভার্ট রয়েছে। সেটিও ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

 

দিনাজপুর শ্রীনিগমানন্দ সেবাশ্রম দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ডা. নন্দ দুলাল চক্রবর্তী এ প্রতিনিধিকে জানান, গত বছরের ১৯ নভেম্বর দিনাজপুর কাহারোল ইউএনও বরাবর আমি সহ নদী তীরে বসবাসরত গ্রামের ২৩০ জন মানুষের গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ দাখিল করি। সাতদিন পর ইউএনও তদন্তের ভার দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাইদুল ইসলামকে। কয়েকদিন পরে প্রায় ৫০ জন গ্রামবাসী সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে গেলে আমাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো সুরাহা না করে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। নিরাশ হয়ে ফিরে আসি আমরা।

 

দিনাজপুর দশ মাইল থেকে পশ্চিমে ঢেপা নদীর ঘাট পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাঁকা সড়ক রয়েছে। এখানে আছে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে অধ্যায়নরত ৩৫০ জন ছাত্র/ছাত্রী আছে। একটি সরকার অনুমোদিত দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল রয়েছে। একটি সরকারি নিবন্ধিত অনাথ আশ্রম ও একটি বৃদ্ধাশ্রম আছে। প্রার্থনার জন্যে একটি মন্দির আছে।

 

কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্য নিয়ে এলাকাবাসীর উপর কর্ম তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায়, বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা, ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও পরিবহনের বিকট শব্দে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরছেন।

 

নদীর তীরে প্রতিষ্ঠানের পশ্চিম পাশে ৩০০ পরিবার বসবাস করে। বন্যার সময় প্রতি বছর তাদের বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করে। গেল বছর এই মাটি তাদের বন্যা হতে অনেকটা রক্ষা বাধ হিসেবে কাজ করেছে। তাই এই মাটি যদি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে আর রক্ষা বাঁধ থাকবে না। এমনকি তাদেরকে বন্যার কারণে ঘর/বাড়ি ছাড়া হতে হবে।

 

বালু মহালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক দেখা শোনার দায়িত্বে থাকা রফিকুলকে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেন, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিবুল ওয়ারিশের, তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান বাবলুর শ্যালক সবমিলিয়ে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অনুমতি নিয়ে আমরা এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। ভারি যানবাহন ডা¤প ট্রাক চলাচলে কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে।

 

আরও দুটি ছোট বড় কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম-প্রসঙ্গে বলেন, কালভার্ট আমরা নির্মাণ করে দেবো। পাকা রাস্তা দেবে যাওয়া এবং ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ এ প্রতিনিধিকে জানান, কাহারোল উপজেলার উক্ত স্থানে বালু মহালের ইজারা দেওয়া আছে। আপনি ইউএনও’র সাথে কথা বলেন বিষয়টি আমি দেখবো।

 

কাহারোল ইউএনও আমিনুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version