-->
শিরোনাম

স্কোয়াশ চাষে সফল বাগেরহাটের মাহাবুব

বাগেরহাট প্রতিনিধি
স্কোয়াশ চাষে সফল বাগেরহাটের মাহাবুব
মোরেলগঞ্জের কৃষক মাহাবুবের স্কোয়াশের খেত

বাগেরহাটের কৃষক মাহাবুব স্কোয়াশ চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এই ‘স্কোয়াশ’ একটি বিদেশি সবজি। বিগত কয়েক বছর দেশের উত্তারঞ্চলে বিদেশি সবজি স্কোয়াশের চাষ হচ্ছে। বাগেরহাটে এই প্রথম মোরেলগঞ্জের আলতী বুরুজ বাড়ি গ্রামের কৃষক মাহাবুব স্কোয়াশের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি দেখতে অনেকটা শসার মতো। স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। সবুজ ও হলুদ দুই রঙের হয়ে থাকে এ সবজি।

‘স্কোয়াশ’ হার্টের যত্নে উপকারী। হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায় হলুদ স্কোয়াশ। এতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম হার্টের জন্য উপকারী। ওজন কমাতে গ্রীষ্মকালীন স্কোয়াশ স্থূলতারোধে বিশেষ উপকারী। এতে ক্যালোরির আধিক্য নেই। ক্যান্সার প্রতিরোধে স্কোয়াশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের ফ্রি র‌্যাডিকেলস দূর করে। এর বেটাক্যারোটিন ক্যান্সারের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দূরে রাখে আমাদের। স্কোয়াশে থাকা ভিটামিন সি অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্কোয়াশের ম্যাঙ্গানিজ মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে। এটি স্পাইনালের জন্য বিশেষ উপকারী। চোখের যত্নে এতে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন ও লুটেইন। লুটেইন চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সহায়তা করে।

এক কাপ স্কোয়াশে ২৪০০ মাইক্রোগ্রাম লুটেইন রয়েছে। আঁশের চমৎকার উৎস এই সবজিটি। ফলে হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এতে ভিটামিন, মিনারেল, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, কপার, রিবোফ্লাবিন, ফসফরাস, ক্যারোটিনয়েডস, বেটা-ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি রয়েছে। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে এই স্কোয়াশ। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেটা ক্যারোটিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা অ্যাজমা প্রতিরোধ করে। চকচকে উজ্জ্বল ত্বকের জন্য স্কোয়াশ একটি অনন্য খাবার। একই সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যাও দূর করে এটি। চুলের জন্যও ভীষণ উপকারী।

স্কোয়াশের লতা কুমড়োর লতার মতো। গাছের প্রতিটি পাতার গোড়ায় থাকে স্কোয়াশ। একেকটি স্কোয়াশের ওজন এক থেকে দেড় কেজির মতো। একটি স্কোয়াশ গাছে গড়ে ১৫-২০ কেজি ফল হয়। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে সবজি হিসেবে যেমন এর চাহিদা রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সুপার শপে এর চাহিদা অনেক। স্কোয়াশ রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে এটি সালাদ হিসেবে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার আলতিবুরুজবাড়ীয়া গ্রামের প্রবাস ফেরত কৃষক মো. মাহাবুবুর রহমান বাগেহাট জেলায় প্রথম বিদেশী স্বাস্থ্য উপকারী স্কোয়াশ এর চাষ শুরু করেছেন। তিনি এ সবজি চাষে সফলতা পাচ্ছেন। তার এই বিদেশি সবজির চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে একই গ্রামের আরো অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষ শুরু করেছেন।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এটি শীতকালীন সবজি। স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এর বীজ বপন করতে হয়।

 

তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরে জমিতে এ বীজ রোপণ করা হয়। বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে। ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস। দেশের উত্তারঞ্চলে স্কোয়াশের বেশি চাষ হলেও বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় এই প্রথম স্কোয়াশের চাষ শুরু হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version