-->
শিরোনাম

মাতৃভাষা দিবসে ১২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট চাষীদের

যশোর প্রতিনিধি
মাতৃভাষা দিবসে ১২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট চাষীদের
ঝিকরগাছার, গদখালীর অর্কিড ফুলের বাগান

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের বাজার এখন লোকে লোকারণ্য। ভাল ব্যবসা করছেন যশোর, ঝিকরগাছা, গদখালী, নাভারনের ফুল চাষিরা। ফুলের দাম ভালো পাওয়ায় এ দিবসে ১২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন তারা।

ঝিকরগাছার, গদখালীর ফুল ব্যবসায়ী আজিজ রহমান জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের বাজার ধরতে তারা অনেক ব্যস্ত সময় পার করেছেন। দীর্ঘ পরিশ্রম করেছেন। বিগত তিনটি মৌসুমের মধ্যে এবারই পরিস্থিতি বেশ ভাল।

ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ভালো ব্যবসার আশা করছি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি ও গদখালি ফুল চাষি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৭ হাজার ফুল চাষি রয়েছেন। সারা বছর অল্প ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রয়ারি মাসের বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখেই এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন। এবার ফুলের দাম বাড়ায় বিক্রি শত কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ফুলের আবাদ হয়েছিল ৬৩২ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৩৩ হেক্টর এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আবাদ হয়েছিল ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ৮০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে।

যশোরের গদখালী ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কুয়াশা ভেদ করে ভোর ৫টা থেকে শতশত ফুল চাষিরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে ক্রেতার আসায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতা আসছেন ফুল কিনতে। বাজারের মধ্যে রং-বেরঙের নানা ধরনের ফুলের সমাহারে বাজারটি যেন লালে লাল হয়ে গিয়েছে। এখানে সব ধরনেরই ফুল রয়েছে। কি নেই এখানে। গাঁদা থেকে শুরু করে চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, কসমস, গোলাপ, ডেইজি জিপসি, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, ডালিয়াসহ প্রায় সব রকমেরই ফুল রয়েছে। বাজারে যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। ফুল কিনছেন ক্রেতা। স্থানীয় ফুল চাষি বাকের হোসেন জানান, করোনার মধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফুলের তেমন দাম পাইনি। এই ফেব্রুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটা জাতীয় ইস্যু রয়েছে। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি। এই তিন দিবসে ভালো লাভ হয়েছে এবার। আমরাও সেভাবেই প্রস্তুুতি নিয়েছিলাম।

যশোর কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যশোরে ৩টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ৪২টি দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হয়। প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হয় এ অঞ্চলে। আর এই ফুলের চাষের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক জড়িত। দূর-দূরান্ত থেকে লোক এসে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কৃষক ২,২৬৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। চলতি অর্থ বছরে ২,৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে।

ঝিকরগাছা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা সব সময় পাচ্ছে ফুল চাষিরা। কৃষকদেরকেও সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে এ অঞ্চলের কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হতে পারে। নজরকারা এ ফুলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version