-->
শিরোনাম
মাগুরায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রাস্তায় আঁকা হয়েছে শহীদ মিনার ও বর্ণমালা, দুপায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে পথচারীরা

মাগুরা প্রতিনিধি
রাস্তায় আঁকা হয়েছে শহীদ মিনার ও বর্ণমালা, দুপায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে পথচারীরা

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষাকে বাংলার দাবিতে রাজপথে রক্ত দিয়েছে রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই। তাদের সেই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের বাংলা ভাষা। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে একাধিক আন্দোলন সাধিত হয়েছে যার চূড়ান্ত রূপ একাত্তরের স্বাধীনতা। সেই ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের দেশে বিভিন্ন স্কুল কলেজ গুলোতে স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মিনার।

 

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরীতে ফুল দিয়ে শহীদদেরকে জানানো হয় শ্রদ্ধা। তাদের সম্মানে করা হয় নানা আয়োজন। দেওয়ালসহ রাজপথে একুষের সম্মানে অঙ্কন করা হয় চিত্র। এই ভাষা শহীদদের কি সম্মান জানাতে শহীদ মিনারে উপস্থিত অনেকেই জুতা পায়ে উঠে পড়েন শহীদ বেদীতে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনার জন্ম হয়।

 

এবার মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর মহত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মাগুরার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আঁকা হয়েছে ২১ এর আলপনা। এই আলপনার মধ্যে শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি মহিলা কলেজ সড়কে আঁকা হয়েছে শহীদ মিনার ও বিভিন্ন বর্ণমালা। যে শহীদ মিনার ও বর্ণমালা দু পায়ে মাড়িয়ে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ চলাচল করছেন শহরে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

 

যেখানে শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে উঠলেই শহীদদেরকে অসম্মান করা হয় সেখানে শহীদ মিনার পাড়িয়ে চলাচল করা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারীরা।

 

একুশের আলপনায় মাগুরা' এই শিরোনামে মাগুরা  জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে আলপনার রঙে সজ্জিত করা শুরু করে মাগুরার চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিকসহ এক ঝাঁক স্বেচ্ছাসেবক।

 

মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর মহত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শহরের ভায়নার মোড় থেকে চৌরঙ্গীর মোড় হয়ে নোমানী ময়দান শহীদ বেদী পর্যন্ত এবং কেশব মোড় থেকে চৌরঙ্গীর মোড় হয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও সরকারি মহিলা কলেজ রোডে আলপনা আঁকে সংশ্লিষ্টরা।  

 

শহীদ মিনারের চিত্র অংকন পাড়িয়ে আসা মোঃ ওমর ফারুক বলেন, এখানে শহীদ মিনার আঁকা এটি একটা অত্যন্ত দামি জিনিস। আমিও তো খেয়াল করিনি এটা পাবাড়ি এসেছে। তবে আমার মনে হয় এটা সড়কে আঁকা ঠিক হয়নি।

 

মহিলা কলেজে যাওয়া একাধিক ছাত্রীরা বলেন, বইয়ে বর্ণমালা থাকে যেগুলো অনেক সময় পা লাগলে আমরা সালাম করি। তাছাড়া শহীদ মিনার গুলোতে আমরা সাধারণত জুতা পায়ে উঠি না। রাস্তার মধ্যে শহীদ মিনার ও বর্ণমালা আঁকায় আমাদেরকে এগুলো পাড়িয়েই কলেজে যাওয়া লাগছে। আমাদের মনে হয় রাস্তাতে অন্যান্য আলপনা গুলা আকা ঠিক থাকলেও বর্ণমালা বা শহীদ মিনার আঁকা ঠিক হয়নি।

মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন,মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের সকল আন্দোলনের  সূতিকাগার। এটার মাধ্যমেই পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। আমাদের কলেজের প্রবেশপথে কে বা কারা আলপনা এঁকেছে সেগুলো বেশ ভালো হয়েছে। তবে সেখানে শহীদ মিনার ও বিভিন্ন বর্ণমালা আঁকা হয়েছে যেগুলো ছাত্রছাত্রীরা পাড়িয়ে কলেজে আসছে। প্রভাত ফেরিতে এই বর্ণমালা ও শহীদ মিনার পাড়িয়ে কিভাবে শহরে যাব সেটাই ভাবছি।

 

আলপনা আঁকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যতম উদ্যোক্তা পরিবর্তনে আমরাই এর সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় বলেন, রাস্তার বিভিন্ন অংশে আলপনা,বর্ণমালা ও শহীদ মিনারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এখন অনেকের কাছে প্রশ্ন আসতে পারে শহীদ মিনার আমাদের সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় এটি রাস্তায় কেন আঁকা হয়েছে এখানে বিভিন্ন গাড়ি-ঘোড়া চলছে। আমরা আলপনার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন শহীদ দিবস অমর একুশে ফেব্রুয়ারির যতগুলো স্মৃতি রয়েছে এগুলো চিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম আছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটি শুধুমাত্র একটি চিত্র যেটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। চিত্রের সঙ্গে মূল শহীদ মিনার মিলিয়ে ফেলা কিছুটা ভুল হবে বলে মনে করি।

 
ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version