-->
শিরোনাম

ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ

সুপ্তি রায়
ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ

পাকিস্তানের জন্মের ৭ মাস পরের কথা। মো. আলী জিন্নাহ তখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, গণ পরিষদের সভাপতি এবং মুসলিম লীগেরও সভাপতি।

৯ দিনের পূর্ববঙ্গ সফরে তিনি জীবনের প্রথম ও শেষবারের মত পূর্ববঙ্গে এসেছিলেন। তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি সভায় বক্তৃতা দেন। ঢাকায় প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ। সেখানে তার উচ্চারিত কিছু কথা একসময় তারই প্রতিষ্ঠিত নতুন দেশটির ভাঙন ডেকে আনতে ভূমিকা রাখবে তিনি হয়তো সেটি কখনো ভাবেন নি। সভায় তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু-অন্য কোন ভাষা নয়।

ইংরেজিতে দেয়া সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করেই আপনাদের বলছি যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এবং অন্য কোন ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু।’

কয়েকদিন পর মি. জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছাত্রদের সামনে আরো একটি ভাষণ দিলেন। সেখানেও তিনি বললেন, ‘পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিজেদের সরকারি কাজে যে কোন ভাষা ব্যবহার করতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে একটিই এবং তা হবে উর্দু।’

সে সময় কয়েকজন ছাত্র ‘না’, ‘না’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছিলেন-যা জিন্নাহকে কিছুটা অপ্রস্তুত করেছিল। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন তিনি।

মো. আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসব কথা বলেছিলেন এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে। তা হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, নতুন দেশের ডাকটিকিট, মুদ্রা, মানি-অর্ডার বা টাকা পাঠানোর ফর্ম, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড-এগুলোতে শুধু উর্দু ও ইংরেজি ব্যবহৃত হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও সরকারি চাকরিতেও ছিল অবাঙালিদের প্রাধান্য। পরে দেখা যায়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে নৌবাহিনীতে লোক নিয়োগের ভর্তি পরীক্ষাও হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজিতে। এ নিয়ে সে সময় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত পত্রিকা ইত্তেহাদে।

মো. আলী জিন্নাহ যেদিন কার্জন হলে ভাষণ দেন-সেদিনই বিকেলে তার সাথে দেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি দল। তাকে একটি স্মারকলিপিও দেয় ছাত্রদের দলটি। তাতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয় এবং কানাডা, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডের মত একাধিক রাষ্ট্রভাষা আছে এমন কিছু দেশের উদাহরণ দেয়া হয়।

মি. জিন্নাহ ঢাকায় দেয়া তার ভাষণগুলোতে বার বার বলেছিলেন ‘বাংলা ভাষার দাবি যারা করছে তারা প্রাদেশিক মানসিকতায় আক্রান্ত এবং উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা না হলে তা পাকিস্তানের ঐক্য-সংহতি ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য নষ্ট করবে। তিনি বলেছিলেন ‘যারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথা বলছে, তারা পাকিস্তানকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ।’ এতে তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সব প্রান্তের লোকে উর্দু বোঝে, সর্বোপরি অন্য যে কোন প্রাদেশিক ভাষার চাইতে ভালোভাবে ইসলামের সংস্কৃতি এবং মুসলিম ঐতিহ্যকে ধারণ করে উর্দু। তা অন্য ইসলামী দেশগুলোয় ব্যবহৃত ভাষাগুলোর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি।’

কিন্তু তার প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে বাঙালি এবং তাদের ভাষা যে বাংলা-এ সম্পর্কে মো. আলী জিন্নাহর ধারণা ছিল খুবই কম।

অথচ এর আগেই পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদের অধিবেশন বসেছিল ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি। তাতে গণপরিষদে কার্যক্রমে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাও যেন ব্যবহৃত হতে পারে- এমন এক প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তার যুক্তি ছিল- পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লক্ষ লোকের মধ্যে ৪ কোটিরও বেশি লোকের ভাষা বাংলা। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাই বাংলা। তাই বাংলাকে পাকিস্তানের একটি প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে নয়, বাংলাই অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। কিন্তু তার এ সংশোধনীর প্রস্তাব গণপরিষদে টেকেনি। এমনকি গণপরিষদের বাঙালি সদস্যরাও সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তাকে সমর্থন করতে পারেননি। এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্ররা ক্লাস বর্জন ও ধর্মঘট করে। ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় পালিত হয় ‘ভাষা দিবস’।

ঢাকায় ১১ মার্চ বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনে বাংলা ভাষার জন্য বিক্ষোভ হয়, দুজন মন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন বিক্ষোভকারীরা। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মো. নাজিমুদ্দিনকে গণপরিষদ ভবন থেকে বের করে নিতে সেনাবাহিনী ডাকতে হয়েছিল। পুলিশ যে আন্দোলনকারী নেতাদের গ্রেপ্তার করে তাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, অলি আহাদের মতো অনেকে। এই নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১৩-১৫ই মার্চ ঢাকায় ধর্মঘটও পালিত হয়েছিল। দুদিন পর খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ছাত্রদের এক বৈঠক হয়। এতে চুক্তি হয় তার সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাকিস্তানের গণপরিষদকে অনুরোধ করবে।

এই রকম বিক্ষুব্ধ পরিবেশের মাত্র ১০ দিন পরই ঢাকায় আসেন জিন্নাহ। আর সম্ভবত এর প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি তার বক্তৃতায় ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ কথাটি বলেছিলেন।

কিন্তু প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, চুক্তি, স্মারকলিপি, পার্লামেন্টে বিতর্ক - এসবে দৃশ্যত তেমন কোন কাজ হয়নি। মো. আলী জিন্নাহ’র মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কয়েক বছর ধরে নানা রকম প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব, সংবাদপত্র-সভাসমিতিতে বিতর্ক চলতে থাকে। ১৯৫২ সালের শুরু পর্যন্ত বাঙালি রাজনীতিবিদদের বড় অংশই জোরালোভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দুর বিরুদ্ধে মনোভাব ব্যক্ত করতে থাকেন। থেমে থেমে আন্দোলন চলছিল।

খাজা নাজিমুদ্দিন এর মধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৭ শে জানুয়ারি এক বক্তৃতা দেন। যাতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন আবার নতুন করে জ্বলে ওঠে। পূর্ব-বঙ্গের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও খাজা নাজিমুদ্দিন সেই বক্তৃতায় বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, এবং দুটি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কোন রাষ্ট্র সমৃদ্ধির পথে এগুতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘পূর্ব বঙ্গের ২৭টি শিক্ষাকেন্দ্রে এর মধ্যেই আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।’ এর ফলে নতুন করে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ, ধর্মঘট, হরতাল।

গঠিত হয় সর্বদলীয় একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা ঠিক করেন-তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবেন।

আজকের ঢাকা মেডিকেল কলেজ সেসময় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন। সেখানে ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারীরা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গেলে পুলিশ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে। পরে কাঁদানে গ্যাসও নিক্ষেপ করে। দুপুরের পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের একটি দল গণপরিষদ ভবনের দিকে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।

১৯৫২ সালের সেইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ছিলেন, মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন। বছর তিনেক আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে তার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে সেদিনকার চিত্র। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে গ্রহণ করি আমি। কপালে গুলিবিদ্ধ রফিককে দেখেই মৃত ঘোষণা করা হয়। আর উরুতে গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত মারা যান রাতে, আমার চোখের সামনেই।’ পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কয়েকটি জায়গায় আবার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। সরকারি হিসেবে চারজন নিহত হবার কথা বলা হয়। কিন্তু দু'দিনে ঠিক কতজন আসলে নিহত হয়েছিলেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো অজানা।

ভাষা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ, তা ভেঙে ফেলা ও পরে পুননির্মাণ, একুশে নিয়ে গান ও কবিতা রচনা, - এগুলোর মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই বাঙালির এক প্রতীকি সাংস্কৃতিক ঘটনায় পরিণত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি।

একুশে ফেব্রূয়ারির গুলিবর্ষণের ঘটনার পর মুসলিম লীগ সরকারের প্রতিক্রিয়া মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৯৫০ এর দশক জুড়ে বড় রকমের পরিবর্তন ও মেরুকরণ ঘটে যায়। এর আগে ১৯৪৯ সালে খাজা নাজিমুদ্দিনের বিরোধীরা মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতারা আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন দল গঠন করেছিলেন- পরে যা পরিণত হয় আওয়ামী লীগে। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল মিলে গঠিত যুক্তফ্রন্ট পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক নির্বাচনে ২৭০টি আসনের ২২৩টিতে জয়লাভ করে। পূর্ববঙ্গের ঢাকায় ১৯০৬ সালে যে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল-সেই পূর্ববঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম লীগ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

 

শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু এবং বাংলা- এই দুই ভাষাকে স্থান দেয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশই স্পষ্ট হতে থাকে। অর্থনীতি, বাজেট বরাদ্দ, সরকারি চাকরির সুযোগ, রাজস্ব ও কর- এরকম সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাধান্য আর পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করার বিষয়টি রাজনীতিতে প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।

 

আবার ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পর রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হলো, মেয়েরা টিপ দিতে পারবেনা- এসব শুরু হলো, তখন এর বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন হলো। আর ৬ দফা ঘোষিত হবার পর পূর্ববঙ্গে গাড়ির নাম্বার প্লেট, দোকানের সাইনবোর্ড- এসব বাংলায় করা হতে লাগলো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা দিতে চায়নি পাকিস্তানের শাসকরা। এর পরিণতিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

ভাষা আন্দোলন বড় ঘটনা হলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মূল দ্বন্দ্ব ছিল অর্থনৈতিক। মনে রাখতে হবে ১৯৫৬ সালে বাংলা তো পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হয়ে গেল কিন্তু বাঙালির আন্দোলন থামলো না। শেখ মুজিব ৬ দফা দিলেন কেন? কারণ আমাদের মূল দ্বন্দ্বটা হচ্ছে অর্থনৈতিক। পূর্ববঙ্গের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা রূপ পেতে থাকে ১৯৫৮ সালের পরে। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে আন্দোলনটিকে পথে নিয়ে গেলেন।

 

তিনি ১৯৪০ এর দশক থেকে রাজনীতি করছেন, তাই বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্রের আকাঙ্খার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে তার পূর্ণ ধারণা ছিল। তার সাথে ৬ দফার ধারণা মিলে যায়। তাই তিনি যখন ৬ দফা দিলেন - তিনি ‘আলাদা দেশ’ এই কথাটা বলছেন না, কিন্তু এটা পরিষ্কার আলাদা দেশের কথাই, শুধু পতাকা ওড়ানোর কথা নেই। ৬ দফার পর আর পাকিস্তানের টিকে থাকা সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version