-->

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, নেই শহীদ মিনার

খানসামা (দিনাজপুর), দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, নেই শহীদ মিনার
খানসামার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার

বিদ্যালয় আছে। নেই শহীদ মিনার। তাই হয় না একুশে ফেব্রুয়ারির কোনো আয়োজন। যদিও সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক। ভাষা আন্দোলনের একাত্তর বছরেও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো তৈরি হয়নি শহীদ মিনার। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের অন্যত্র শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করতে হচ্ছে।

একুশের প্রথম প্রহরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা মেলে না শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের উদাসীনতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। অথচ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তা পারছে না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরি কলেজ মিলে মোট ৯৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলার কোনো মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজে শহীদ মিনার না থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। এদিকে উপজেলার ১৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও অনেক বিদ্যালয়ে লোহার পাইপ দিয়ে বানানো শহীদ মিনার। সেগুলো জং ধরে বর্ণহীন।

তবে কিছু বিদ্যালয়ে ইট-সিমেন্টের মানসম্মত শহীদ মিনার রয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চলছে পুরোদমে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। ভাষা আন্দোলন ও দেশ স্বাধীন হওয়ার এত দিন পরও শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনজুরুল হক বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ মিনার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কমিটির সভাপতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

খানসামা ইউএনও মো. তাজ উদ্দিন বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোকে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।’

এদিকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ১৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার। প্রতি বছর কলাগাছ, আর বাঁশের কঞ্চি ও সাদা রঙিন কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ওই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারী মহান আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন করে আসছে।

জানা যায়, দশমিনা উপজেলার সরকারি প্রাথমিক ১৪৫টি, নিন্ম মাধ্যমিক ৬টি, মাধ্যমিক ২০টি, দাখিল ১৬টি ও কলেজ ৪টি, ফাজিল ২টি, কামিল ১টি ও ডিগ্রী কলেজ ১টি। এরমধ্যে মাধ্যমিকে ১১টি, কলেজ ১টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। অন্যদিকে ১৪৫টি প্রাথমিক, ৬টি নিম্ন মাধ্যমিক, ৯টি মাধ্যমিক, দাখিল ১৬টি ও কলেজ ৩টি, ফাজিল ২টি, কামিল ১টি ও ডিগ্রী কলেজ ১টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে বিপাকে পরতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিটলারুজ্জামান বলেন, উপজেলায় ১৪৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু কোন বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে দশমিনা ইউএনও মোসা. নাফিসা নাজ নীরা বলেন, এই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সাথে আলাপ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version