-->
শিরোনাম

একটি সেচনালায় পাহাড়ের ১০০ একর জমি এখন তিন ফসলি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
একটি সেচনালায় পাহাড়ের ১০০ একর জমি এখন তিন ফসলি
সেচনালা প্রকল্পের মাধ্যমে বোরো চাষের আওতায় এসেছে বিস্তীর্ণ এলাকা

বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের উদালবনিয়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক সাগ্যউ মারমা। ছয় একর ধানি জমি রয়েছে তার। সেই জমিতে কেবল বর্ষাকালেই ধান চাষ করতে পারতেন তিনি। সেচের অভাবে শীতে মৌসুমি ফসল চাষেরও কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি সেচনালার কারণে এখন সেই জমি তিন ফসলি। সাগ্যউ মারমা বলছিলেন, সেচনালা প্রকল্পের কারণে এখন তো পানির অভাব নেই। গত বছর থেকে জমিতে প্রথমবারের মত বোরো ধান লাগানো হচ্ছে।

এবার ছয় একর জমিতে কাটারিভোগ, শংকর ও বিনা-১২ জাতের ধান লাগানো হয়েছে জানিয়ে এই মারমা কৃষক বলেন, ‘এখন শুধু আমন ও বোরো ধান নয়। যখন যে মৌসুম শুরু হবে তখন সেই ফসলও লাগানো হবে। আশপাশে স্থানীয় বাজারে আমাদের এখানকার উৎপাদিত শাকসবজি বিক্রি করা হবে।’

কেবল সাগ্যউ মারমা নয়; এই এলাকার ৬০ জন কৃষক এখন তাদের ১০০ একর জমি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। পানির অভাবে থাকা এ এলাকায় সেচনালার কারণে হঠাৎ পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। ২০২৩ সাল থেকে ১০০ একর এই ধানি জমি বোরো চাষের আওতায় চলে এসেছে।

উপজেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে রাজবিলা ইউনিয়নের উদালবনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাজবিলা খালের পাশে বসানো হয়েছে বিদ্যুৎচালিত একটি পাম্প হাউস। সেখান থেকে সেচনালার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় পানি। ধানের চারা রোপণ করা পর্যন্ত প্রয়োজনমত জমিতে পানি ব্যবহার থাকেন কৃষকরা।

সেচের পানি পেয়ে ১০০ একর ধানি জমিতে এখন বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বীজতলা থেকে কেউ তুলে আনছেন ধানের চারা। যার যার জমিতে সেই ধানের চারা রোপন করছেন। আবার মই দিয়ে কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন ধানের চারা রোপণ করতে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত বলেন, এলাকাবাসীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ব্যয়ে ১ হাজার ১৬ মিটার দৈর্ঘ্য সেচনালা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে কৃষকরা তিনবার চাষাবাদের সুযোগ পাচ্ছেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং সেচনালা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। এ সময় কৃষকদের কমবাইন্ড হারভেস্টার মেশিনও দেওয়া হয়।

রাজবিলা ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষক লুলামং মারমা জানান, সেচ ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া পাম্প হাউস পরিচালনার জন্য দুজন কৃষক দায়িত্বে রয়েছেন। তারা কার কখন কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন হবে এগুলো দেখাশুনা করে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘জমির পরিমাণ অনুযায়ী এখানে কৃষককে সেচের খরচ দিতে হয়। এক কানি বা ৪০ শতক জমির সেচের জন্য এক হাজার টাকা খরচ দিতে হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সেচকাজ চলে। বর্ষাকালে তো আমনের জন্য সেচের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া মৌসুমি ফসলের জন্যও সেচের ব্যবহার করা যায়।’

লুলামং মারমার নিজেরও চার একর জমি আছে এখানে। কিছু জমিতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান-৭৪, ব্রি ধান-৮৯ ও হাইব্রিড ধান লাগিয়েছেন। প্রদর্শনী প্লট হিসেবে এক বিঘা জমিতে রপ্তানিযোগ্য ধান বিনা-২৫ এবং বাকি ১ একর জমিতে কাটারিভোগ ধান লাগানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিনা-২৫ ধান হেক্টরপ্রতি ৭ থেকে সাড়ে ৭ টন এবং কাটারিভোগ সাড়ে ৮ টনের মত উৎপাদন হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

কৃষি বিভাগ বলছে, গত বছর থেকে বোরো মৌসুমে ১০০ একর জমিতে ১৫টি ধানের জাত লাগানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনা-১২, বিনা-২৫, ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৭৪, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-১০০, বঙ্গবন্ধু, হাইব্রিড, শংকর, আফতাব ও কাটারিভোগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ৬ হাজার ১৭৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এতে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন। এবার জেলায় মোট ৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যার চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের সুবিধার জন্য সেচনালা প্রকল্পের মধ্যে আধুনিক কমবাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনও দেওয়া হয়েছে। এগুলো কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version