-->

মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে আস্ত একটি নদী

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে আস্ত একটি নদী
রংচটা একটি সাইনবোর্ড থাকলেও অস্তিত্ব নেই নদীর

ঠাকুরগাঁওয়ের চিরচেনা একটি নদীর নাম ভক্তি নদী। সদর উপজেলার ভেলাজান দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। জনশ্রুতি আছে একসময়ের খরস্রোতা ভক্তি নদীতে জাহাজ চলতো। তবে সিএস, কিংবা আরএস ম্যাপে পাওয়া যায়নি এই নদীটির কোনো অস্তিত্ব। নাম নেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায়ও।

 

ঠাকুরগাঁওয়ের ভেলাজান বাজার ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার পথে বাম পাশে তাকালে যে কারও চোখে পড়ে রংচটা একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ভক্তি নদী, মোট দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠাকুরগাঁও।

 

ভক্তি নদীর উৎপত্তি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ও চিলারং ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নভূমি থেকে। নদীটি মূলত রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর উপনদী। রুহিয়া, আখানগর, চিলারং এবং রায়পুর ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে ভক্তি নদী।

 

ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীটি এখন নিম্নভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে চাষ হচ্ছে ধান আর ভুট্টা। তবে বর্ষাকালে এই নদীতে প্রচুর পানিপ্রবাহ থাকে। তাই নদীটি দ্রুতই খনন প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ২০০ বছর আগে এই নদী দিয়ে জাহাজ চলতো। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সওদাগর ব্যবসার কাজে জাহাজে করে এ পথ দিয়ে মালামাল নিয়ে যেতেন ভারতে। এসব কথা বাবার মুখে শুনেছি।

 

নদীপাড়ের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী হাসান আলী জানান, তিনি তার দাদার মুখে শুনেছেন ভক্তি নদীতে একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। জনশ্রুতি আছে, এক পীরের অভিশাপে ভেলাজান যাওয়ার পথে ঝোড়ো বাতাস আর খরস্রোতে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর জাহাজটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

আবুল হোসেন নামের একজন বলেন, বিভিন্ন সময়ে খনন করতে গিয়ে জাহাজের পুরোনো লোহার টুকরা আর কাপড়ের পুঁটলি পাওয়া গেছে। তবে কাপড়গুলো হাতে নিলে মিহি গুঁড়া হয়ে যেত। এলাকাবাসীর ধারণা, নদী খননে যেসব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, সেগুলো ডুবে যাওয়া জাহাজের।

 

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র বলেছে, সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভক্তি নদী। এ বিষয়ে কমিশন চিঠি দিলে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ৮ সদস্যের একটি কমিটি করেন। সদর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, এসএ, সিএস এবং আরএস রেকর্ডের নকশায় নদীটির অস্তিত্ব নেই।

 

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৮৩৬ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে নদীটি বিলীন হয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ‘ভক্তি’ নামে একটি নদী রয়েছে। কিন্তু কমিশনের তালিকায় নদীটি বাদ পড়েছে। পরে জেলা প্রশাসক আট সদস্যের কমিটি গঠন করেন। স্থানীয়দের মুখে এ নদীর নাম শুনে এর নামকরণ করা হয়েছে। এখন এটি নিম্নভূমি। বর্ষাকালে দেড় থেকে দুই মাস পানি থাকে। এর সমস্ত জমি ব্যক্তি মালিকানাধীনে রেকর্ড রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version