-->
শিরোনাম

জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগ

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগ
অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুরে সম্প্রতি রাতদিন ভূমিদস্যুরা সমান তালে পাহাড় কেটে প্লট তৈরির মহাউৎসব শুরু করেছে। এর ফলে ভূমিকম্পের সময় পুরো চট্টগ্রাম ধসে যাওয়ার শঙ্কা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। এদিকে পাহাড় কেটে তৈরি করা প্রতি প্লট ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ১০ নম্বর সলিমপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় এক শ্রেণির ভূমিদস্যু গত কয়েক দিন ধরে রাতদিন স্কেভটর দিয়ে পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে অর্থ লেনদেনের বাণিজ্য চালানো হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সাবেক মেম্বার আব্দুল গফুর ও সাদেকের নেতৃত্বে একটি মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়, তারা পাহাড় কেটে ঘরনির্মাণ করবে। সে অনুযায়ী জঙ্গল সলিমপুরের ২ ও ৩ নম্বর সমাজ এলাকার খাদিজাতুল কোবরা মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হক কোনো ধরনের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে এবং তিনি ১ নম্বর সমাজের অন্ধ কল্যাণ সমিতির পাশে আরসিসি ঢালাই দিয়ে ভবন নির্মাণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হক বলেন, এখানে বাইরের অনেক লোক এভাবে জায়গা কিনে ঘর নির্মাণ করে। সে অনুযায়ী আমিও ঘর করি। এখন ঘরগুলো সংস্কার ও বাড়ানোর জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটা হয়। এতে তো সমস্যার কিছু দেখছি না।

তবে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গায় বৈধভাবে বসবাসকারী স্থানীয়রা জানান, গত বছরও একই সময়ে প্রভাবশালী ঐ চক্র পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে। পরে সেই স্থানের চারপাশে দেয়াল দেওয়ার পাশাপাশি প্লট বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করে। তখন উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর খবর পেয়ে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ করে ছিল। পাশাপাশি উচ্ছেদ করা হয়েছিল পাহাড় কেটে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনাও। তখন পাহাড় কাটায় জড়িত চক্রের ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। ঐ সময় পাহাড় কাটা বন্ধ হলেও ফের সক্রিয় হয় চক্রটি। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকাটিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঠিকাদারি নেয় স্থানীয় ফারুক ও হাসান মিস্ত্রি নামের দুই ব্যক্তি।

এ বিষয়ে হাসান মিস্ত্রি জানান, ‘পাহাড় কাটার পর আমরা চুক্তিভিত্তিক ঘর তৈরি করে দেই। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরা পাহাড় কাটে বলে এতে আমাদের করার কিছু নেই। এমন কি প্রশাসনও সব জানে। কিন্তু এবার পাহাড় কাটা নিয়ে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের।’স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল আলম বলেন, ‘পাহাড় খেকো গফুর ও সাদেককে ম্যানেজ করতে পারলেই পাহাড়ী এলাকার খাস জমি সহজে মেলে। তারা প্রতিটি প্লট ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করে।’

এদিকে ১০ নম্বর সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আজিজ বলেন, আমি ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)র নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে গিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে বললে প্রভাবশালী পাহাড় খেকোদের রোষানলে পড়ি।

উপজেলা সুজনের উপদেষ্টা ও পৌরসদর বাজার কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাহার বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে যেভাবে রাঘববোয়াল অথবা ভূমিদস্যুরা সমস্ত পাহাড় কেটে সাবাড় করার উৎসবে মেতে উঠে। এদের মধ্যে বড় বড় শিল্পপতিরা তাদের কারখানা পাহাড়ের সামনে সমতল ভূমিতে স্থাপন করে। এরপর কারখানার পিছনের বিশাল বিশাল পাহাড় সাবাড় করে ফেলে।আবার প্রভাবশালী ইট ভাটার মালিকরাও পাহাড় কেটে ইট তৈরিতে ব্যস্ত আছে। এতে করে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের সময় মুহূর্তে পুরো চট্টগ্রাম ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সীতাকুণ্ড ইউএনও কে.এম রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য। কিছু প্রভাবশালী পাহাড় কেটে বাণিজ্য করে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি। তবে পাহাড় কাটা বন্ধে শিগগিরই জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান চালানো হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version