সবুজ গাছের ডগায় হলুদ সূর্যমুখী ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঠ জূড়ে সূর্যমুখীর হলদে আভায় বিমোহিত দর্শনার্থীরাও। সৌন্দর্যের এই সূর্যমুখী ফুলেই রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। আর তাই ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। মাত্র ১২০ দিনে ঘরে তোলা যায় সূর্যমুখী বীজ। এছাড়া অন্য ফসলের চেয়ে ফলন ভালো ও তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই ফসলে আগ্রহী হচ্ছেন।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি পূর্ণবাসন প্রণোদনার আওতায় জেলায় ৫৬০ জন কৃষককে বিনামূল্যে দুই কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ এবং ২৫ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়। এ বছর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৭৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এ থেকে ১৬০ মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেলের বীজ পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। গত বছর গাইবান্ধায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছিল।
সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের নাফারকুঠি এলাকায় বেশ কয়েকটি সূর্যমুখী ফুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানগুলোতে দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন। কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে, আবার কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। সবাই মূলত ছবি তোলার জন্যই এসেছেন। কেউ ছবি তুলছেন ক্যামেরা দিয়ে আবার কেউ তুলছেন মোবাইল ফোন দিয়ে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় এলাকা থেকে ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষাথী রিয়াজুল রিয়াদ জানান, আমরা বাঙ্গালিরা আসলেই প্রকৃতি প্রেমী, প্রকৃতির সঙ্গে থাকতে আমাদের ভালো লাগে। আর এই মৌসুমে সূর্যমূখী ফুল প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ রুপে দান করেছে। এই সূর্যমূখী ফুল দেখে আমরা দূর-দুরান্ত থেকে এসেছি, আসতে পেরে ভালো লাগছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের নাফারকুঠি গ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলী ভোরের আকাশকে বলেন, জীবনে এই প্রথমবার ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে পেরে আমি অনেক খুশি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে আশা করি। আর ফলন ভালো হলে আগামীতে আরো বড় পরিসরে চাষ করবো। এ বছর সূর্যমূখী ফুল চাষে লাভবান হলে আমি নিজেই অন্য চাষিদের এই সূর্যমুখী চাষে উৎস জোগাবো।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এটিএম মশিউর রহমান ভোরের আকাশকে জানান, সূর্যমূখী চাষ একটি ভোজ্য তেলের উৎস। সূর্যমূখী তেলে ক্লোড স্টোরেজের মাত্রা খুবই কম। যা হৃদ রোগিদের জন্য খুবই উপকারি। এর জীবনকাল মাত্র ১২০ দিন। এক বিঘা জমিতে ৮-১০ মণ সূর্যমূখীর বীজ পাওয়া যায়। এই বীজে তেলের পরিমাণ ৪০ ভাগ। এতে করে কৃষকরা এখানে থেকে এক সঙ্গে তেল পায় এবং এর খৈল পশু খাদ্য ও মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম ভোরের আকাশকে জানান, কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। বীজ রোপণের পর থেকে আমরা নিয়মিত তদারকিও করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফলনও ভালো হবে। বীজ আহরণ এবং তেল উৎপাদন এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য