-->
শিরোনাম

সেতুর দাবিতে ভোগান্তিতে থাকা ১৪ গ্রামের মানুষ

যশোর প্রতিনিধি
সেতুর দাবিতে ভোগান্তিতে থাকা ১৪ গ্রামের মানুষ
স্থানীয় লোকজন নদ পারাপারের জন্য সাঁকো ব্যবহার করছেন

ভৈরব নদের যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের জরিনার মোড় এলাকায় নেই সেতু। স্থানীয় লোকজন নদ পারাপারের জন্য ওই স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁশের বড় সাঁকো নির্মাণ করেছেন। তবে ওই সাঁকো দিয়ে যানবাহন পারাপার হতে না পারায় স্থানীয় লোকজনকে ৮ কিলোমিটার ঘুরে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে নদের দুই তীরের ১৪ গ্রামের মানুষের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

 

বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও কৃষকদের। এলাকাবাসী নির্ধারিত স্থানে একটি সেতু চান। তারা এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

 

এ বিষয়ে কচুয়া ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বেচ্ছাশ্রমে অন্তত ৫০ বছর আগে ওই নদের ওপর সাঁকো তৈরি করা হয়। ওই সাঁকো দিয়ে ১৪টি গ্রামের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন। এখানে একটা সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। নদের পাড়ের বাসিন্দাদের বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে হলে রুপদিয়া বা দায়তলা বাজার ঘুরে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। এ ছাড়া কৃষিপণ্যও একইভাবে এপার থেকে ওপারে নিতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে ইউএনওকে এখানে সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তখন বিদ্যমান সেতুগুলোর নির্মাণকাজ নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিলেন। যে কারণে দাবিটা পূরণ হয়নি। তবে এখন আবার জোরেশোরে আমরা দাবি তুলব।’

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কচুয়া ইউনিয়নের জরিনার মোড় এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে ভৈরব নদের দুই তীরের মানুষ যাতায়াত করছেন। সাঁকোটির অবস্থা নড়বড়ে। সাঁকোর অনেক বাঁশ নষ্ট হয়ে গেছে। মুনসেফপুর গ্রামে নদের গা ঘেঁষেই প্রাচীন একটি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে প্রায় সারা দিনই পূজা-অর্চনা করতে দুই পারের সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

 

নদপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভৈরব নদের পূর্ব পাশে মুনসেফপুর, মথুরাপুর, ভাগু, দিয়াপাড়া, ভগবতিতলা, ঘোপ, নরসিংহকাটি, নিমতলী, হোগলা ডাঙ্গা ও দেবিপুর এবং পশ্চিম পাশে রায়মানিক কচুয়া, আবাদ কচুয়া, পুড়া কচুয়া ও সাতঘরিয়া। এই ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা ওই সাঁকো। যে কারণে প্রতিবছর নদপাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের বাগানের বাঁশ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি মেরামত করেন। এসব গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে বিদ্যালয় ও কলেজে যায়।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদের দুই পারে রয়েছে রুপদিয়া শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, রুপদিয়া বালিকা বিদ্যালয়, রায়মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমি ও এ কে বিশ্বাস ড্রিম স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

 

নদের পূর্ব পাড়ের মুনসেফপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা জানায়, সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে আধা কিলোমিটার পথ। কিন্তু রুপদিয়া বাজার ঘুরে যেতে হলে অন্তত ৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এতে ভ্যান ভাড়া লাগে।

 

নদের পশ্চিম তীরের রায়মানিক কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা এ.কে বিশ্বাস ড্রিম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী জিল্লুর রশীদ বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ওই সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। পা পিছলে শিশুরা যেকোনে সময় নদের মাঝে পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য নিয়ে দুই তীরের মানুষের যাতায়াত করতে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। ওখানে সেতু হলে ভালো হয়।

 

দুই পারের মানুষের দুর্ভোগের কথা বলতে মুনসেফপুর গ্রামের বাসিন্দা অশোক কুমার দত্ত বলেন, ‘আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পার হওয়া খুবই কষ্টের। তখন নদে বেশি পানি থাকে। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। এই কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না। বহু বছর ধরে শুনি, এখানে সেতু হবে। এমপি-চেয়ারম্যানরা কতবার এসে দেখে বলে গেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু সেতু আর হলো না।’

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, ‘ভৈরব নদের ওই অংশ দেড় থেকে ২০০ মিটার চওড়া। সেতু নির্মাণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি)। আমাদের কাজ অনাপত্তিপত্র দেওয়া। সংশ্লিষ্টরা চাইলে আমরা দেখ ভাল বুঝে সেটি দিয়ে দেব।

 

সেতু নির্মাণের বিষয়ে এলজিইডি যশোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি তালিকায় নেই। উপজেলা পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

 

এ বিষয়ে যশোর সদর ইউএনও রিপন বিশ্বাস বলেন, ওই এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাস্তবতা এটাই এখনো উল্লেখিত স্থানে সেতু নির্মাণের কোন উদ্যোগ আপাতত নেই।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version