-->
শিরোনাম

সেতুর কাজ অসমাপ্ত, ৬ মাস ধরে ঠিকাদার উধাও

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
সেতুর কাজ অসমাপ্ত, ৬ মাস ধরে ঠিকাদার উধাও
সেতু নির্মাণের নামে কতগুলো পিলার দাঁড়িয়ে আছে

ঢাকার ধামরাইয়ে বংশী নদীর ওপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সেতু নির্মাণের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসমাপ্ত কাজের কারণে বর্তমানে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে হাজারও মানুষকে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধামরাই উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুন মাসে ধামরাই উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (ডিডিআইআরডব্লিউএসপি) আওতায় ধামরাই-সাটুরিয়া-টাঙ্গাইল সড়কের মহিষসী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত বাথুলি বাসস্ট্যান্ড সড়কের বেলিস্বর মোহনী মোহন উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন জমির পানি চলাচলের জন্য সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৯৩ টাকা।

এলজিইডির বাস্তবায়নে সেতুটি নির্মাণ করছেন মেসার্স নিরাপদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এক-চতুর্থাংশ কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রায় ৬ মাস আগেই চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সেতুটি দৃশ্যমানই হয়নি। সেতু নির্মাণস্থলে পাইলিংয়ের কাজ আংশিক শেষ হয়ে কয়েকটি পিলারের কতগুলো রড দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তী কাজের জন্য ঠিকাদারের কোনো মালপত্র সেখানে নেই। নেই কাজের কোনো সাইনবোর্ডও।

অপরদিকে, সূতিপাড়া ইউনিয়নের কালামপুর-দেপাশাই-কারাবিল এলাকার মধ্যবর্তী বংশী নদীর ওপর প্রায় ১৬ বছর আগে ৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৮ফুট প্রস্থ নিচু করে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। গত বছর ওই পুরোনো সরু সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৮ টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পান মেসার্স কামারজানী-আনোয়ারা (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া সোমভাগ ইউনিয়নের ফুকুটিয়া-সোমভাগ এলাকার মধ্যবর্তী এলাকায় বংশী নদীর ওপর ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলেও, তা বন্ধ হয়ে যায়। নদীর দুই পাড়ে দুটি গার্ডার, মাঝে দুটি গার্ডার উঠিয়েই ঠিকাদারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এলজিইডি অফিস চাপ দিয়ে কয়েক দফা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে আনলেও বার বার তারা চলে যায়। জিডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বংশী নদীর ওপর ২০০ মিটার টেনলেজ ৯৮ দশমিক ১০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণকাজ পায় মেসার্স সুরমা অ্যান্ড খোশেদা নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আওতায় ব্রিজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা।

গোয়ালদী গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম রাজু বলেন, দেপাশাই-কারাবিল এলাকার মধ্যবর্তী বংশী নদীর ওপর প্রায় ১৬ বছর আগে নির্মিত সেতুটি গত ছয় মাস আগে ভেঙে পাশেই একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন দেপাশাই, কারাবিল, ভালুম, শৈলান, পথহারা, আলোকদিয়া চাপিল, নওগাঁও, কালামপুর, গোয়ালদী, কাশিপুরসহ ১২-১৩টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। ফলে বাঁশের সাঁকোটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে।

সম্প্রতি নদীর স্রোতে পানা আটকে সাঁকোর মাঝখানে বাঁকা হয়ে গেছে। যেকোনো সময় সাঁকোটি ধসে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

মহিষাসী ও দেপাশাই-কারাবিল এলাকার দুটি সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একাধিকবার সেতুর কাজের তদন্ত করতে গিয়েছি। কখনোই ঠিকাদার বা তাদের লোকজনকে পাইনি। উপজেলা মাসিক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদসহ অন্যদের উপস্থিতিতে সকলের মাঝে সেতুর বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। তা রেজুলেশনে এনেছে। কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।’

এ বিষয়ে সেতুর তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমি ধামরাই থেকে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে চলে এসেছি। আমি জানি, সেতুর কাজ চলমান আছে। এর বেশি কিছু জানি না।’

ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী তরুণ কুমার বৈদ্য বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রয়োজনে আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version