-->

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, রমজানের আগেই ক্রেতাশূন্য বাজার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, রমজানের আগেই ক্রেতাশূন্য বাজার
কিশোরগঞ্জে খুচরা বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে

কিশোরগঞ্জের হাওর ও উজান এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে বেচা-কেনা কমেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। প্রতি বছর রোজার আগে ব্যবসা জমজমাট হয়। তবে চলতি বছর বেচাবিক্রি কমেছে। দোকানে বেচাকেনা কমে যাওয়ায় অনেকেই কর্মচারীদের বেতনসহ নিত্যদিনের খরচ মেটাতে পারছেন না। খুচরা দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

 

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের পাইকারি বড় বাজার, পুরান থানা বাজার, কাচারি বাজার, নিয়ামতপুর বাজার, মির্জাপুর বাজার, নিকলী বাজার, মুড়িকান্দি বাজার, তাড়াইল বাজার ও হোসেনপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত ৬ মাসে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনা কমে গেছে। ফলে এসব ব্যবসায়ী এখন আর পাইকারি বাজার থেকে মালামাল কিনতে আসে না। এতে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

জেলার বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবু তাহের মিয়া বলেন, রোজার আগে ব্যবসা জমজমাট হয়। এবার রোজার আগে বেচাবিক্রি কমে গেছে। তাই দুশ্চিতায় মধ্যে পড়েছি। কারণ আটা-ময়দা, তেল, ডাল, লবণ, চিনি সবকিছুই তিনি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান বাজারগুলো থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু খুচরা বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আগের মতো মাল কিনতে তার দোকানে আসছেন না। তিনি জানান, তার মতো সারা জেলায় আরও অন্তত কয়েক’শ পাইকারি ব্যবসায়ী মালামাল বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। ফলে পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

 

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সাবেক ব্যাংকার দেবরাজ জানান, শহরের বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা নেই। আর যারা চাকরি করেন তাদের নির্দিষ্ট বেতনের টাকায় ঘর-সংসারসহ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় এই শ্রেণির মানুষ খুব হিসাব করে চলছে। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া তারা কিছুই কিনছেন না।

 

অর্থনৈতিক সংকটে ব্যবসায়ী এবং তীব্র বেকারত্ব সমস্যার বিষয়ে নুরুল উলুম আদর্শ মাদরাসার সহকারি অধ্যাপক সামিউল হক মোল্লা জানান, বেকার সমস্যা তীব্র। তিনি শহরের খড়মপট্টি এলাকার বাসিন্দা। সেই আবাসিক এলাকা বুলবুল ভিলা মোড় থেকে নীলগঞ্জ মোড় পর্যন্ত ২০০০ গজের মধ্যে মনোহারি ও স্টেশনারি দোকান রয়েছে ৫০টি। অথচ গত বছর ছিল মাত্র ২৫টির মতো। এসব বেকার মানুষ বাধ্য হয়ে অল্প পুঁজিতে এলাকায় মনোহারি ও স্টেশনারি দোকান খুলেছে। সারা দিনে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে অনেকেই বিদ্যুৎ বিল ও দোকান ভাড়াও দিতে পারে না। বেকার সমস্যা দূর করতে তারা এসব দোকান খুলে বসলেও কার্যত এলাকায় বাসিন্দা বাড়েনি। প্রায় প্রতিটি দোকানে একই ধরনের মালামাল থাকায় এবং বাজার খুব প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় এসব খুচরা ব্যবসায়ীদের ৫ থেকে ৭ শতাংশ লাভ করা কঠিন। কারণ ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়েনি।

 

মিঠামইনের উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন জানান, মনোহারি এখন হাওরে মালামাল পরিবহন সহজ হয়েছে। বালিখলা ও মিঠামইন ফেরি চালু হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানির মালামাল এখন তাদের নিজস্ব পরিবহন দিয়ে হাওরের বড় বড় বাজারে পৌঁছে দেন। ফলে অধিকাংশ প্রয়োজনীয় মালমালের জন্য এখন আর বড় মোকাম বা হাট-বাজারে যেতে হয় না। এতে পাইকারি বাজারে বেচাবিক্রি কমে গেছে। বর্তমান সময়ে হাওর এলাকার মানুষ ভাতের নিশ্চয়তা পেলে অন্য কিছু কিনতে চায় না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়ছে। তাই ডাল-ভাত মনোহরি শাক-সবজি কিংবা শুঁটকি মাছেই এ এলাকার মানুষের জন্য যথেষ্ট। এসব কারণে গোটা হাওর এলাকার বাজার পরিস্থিতি খুবই খারাপ।

 

বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম জানান, মনোহারি কৃষিভিত্তিক এ জেলার অর্থনীতি কার্যত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গত বছর বোরো ধানের দাম না পাওয়ায় এবং মধ্য ও নিম্নবিত্তদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেচাকেনা কমে গেছে। তারপরও ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

কিশোরগঞ্জ ক্যাবের সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু বলেন, মনোহারি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বাজার পরিস্থিতি ভালো না। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমা অতিক্রম করছে। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক হলে মানুষ কিনতে পারবে। আসন্ন রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রস্তাব রয়েছে। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, এবার কঠোর নজরদারি করা হবে। এতে সাধারণ মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে জিনিসপত্র কিনতে পারবে।

 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মনোহরি এবার রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে কঠোরভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version