কুষ্টিয়ায় রেলওয়ের শত কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে। কৃষি লিজের অজুহাত দেখিয়ে কুষ্টিয়া বড় রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বপাশে অবস্থিত ‘আইওডব্লিউ’ ও ‘পিওডব্লিউ’র পরিত্যক্ত বাংলো কম্পাউন্ডের সম্পত্তিতে খুঁটি পুঁতে ও ঢেউটিনের ঘেরা দিয়ে অতি সম্প্রতি দুইবিঘা জমি জবর দখল করে নিয়েছে চক্রটি। দখলকৃত ওই সম্পত্তি আবাসিক প্লট হিসাবে বিক্রির পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
পোড়াদহ ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো শহিদুজ্জামান রেলওয়ের সম্পত্তি জবর দখলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই উল্লেখিত রেল ভূ-সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।’
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পোড়াদহ ভূ-সম্পত্তি বিভাগের আওতাধীন ১৩নং কাচারী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালী মৌজার ৯নং শীটের ৪১৭০ ও ৪১৭১ নম্বর দাগে মিলপাড়া এলাকায় অবস্থিত রেলপথ অপারেশনাল ডিপোর ৬৬ শতাংশ (দুইবিঘা) সম্পত্তি ভূমিদস্যুরা দখল করে নেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষের নেতৃত্বে ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতের অন্ধকারে লাঠিসোটা ও অস্ত্র-শস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা রেলওয়ের দুই বিঘা জমির ওপর আরসিসি খুঁটি পুঁতে জবর দখল নেয়। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তির অর্ধেকাংশ ঢেউটিনের বেড়া স্থাপন করে পাকাপোক্ত দখলে নেয় ভমিদস্যুরা। দখলকৃত ওই জমি এখন আবাসিক প্লটে ভাগ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন দখলবাজরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। দখলদারিত্ব ঠেকাতে এলাকাবাসী অতিসত্ত্বর রেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
কুষ্টিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা লাভলু জানান, ‘পৌর কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষ জগৎ ও খান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রনিসহ তাদের অসাধু সহযোগীরা আইনের তোয়াক্কা না করে রেলের ফাঁকা জায়গাটি দখলে নিয়েছে। কৃষি লিজের দাবি করা হলেও প্লট আকারে দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রির অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে কোন মুহুর্তে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশংকা করেন তিনি। সাবেক ওই কাউন্সিলর দখলদারিত্ব ঠেকাতে রেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।’
এলাকার অপর সাবেক কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন খান জানান, ‘ভূমিদস্যুরা অনেকদিন ধরেই রেলের সহায় সম্পত্তি অবৈধ দখল অব্যাহত রেখেছে। নিরীহ মানুষদের কাছ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে ভূমিদস্যুরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দখলবাজরা ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘আইওডব্লিউ’ ও ‘পিওডব্লিউ’র পরিত্যক্ত বাংলোর জমিতে খুঁটি গেড়ে ও টিনের বেড়া দিয়ে রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে অবৈধ দখল করেছে।
মিললাইন এলাকার বাসিন্দা রকিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘চাষের জন্য জমি লিজ নেয়ার কথা বললেও তারা গৃহ নির্মাণের জন্য ওই জমি অন্যত্র বিক্রি করছে। এভাবে কুষ্টিয়ার মহাশ্মশান ঘাট পর্যন্ত রেলের জায়গা দখলবাজরা ঘরবাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে।’
১০নং ওয়ার্ডের অভিযুক্ত কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষ জগৎ জানান, ২০২০ সালে তার নিকট আত্নীয় রেলওয়ের দুইবিঘা জমি লিজ গ্রহণ করেন। বর্তমানে খাজনাও হালনাগাদ করা হয়েছে। জমিতে খুঁটি পুতে বাউন্ডারি দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি লিজ গ্রহীতা রেলবিধির মধ্যে থেকেই এটা করেছে।’
তবে মিরপুর উপজেলার ১৩ নং কাচারী পোড়াদহ রেল ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো শহিদুজ্জামান নথিপত্র ঘেঁটে জানান, রেলপথ অপারেশনাল ডিপো সংলগ্ন বা ‘আইওডব্লিউ’ বাংলো কম্পাউন্ডের জমিতে কোন লীজ নেই। তবে ২০২০ সালে দেওয়া কৃষি লীজের শর্ত ভঙ্গসহ নবায়ন না করায় তা অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং শীঘ্রই রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) সোহাগ রানা বলেন, অপারেশনাল সম্পত্তি দখলের ঘটনাটি দুঃখজনক। কৃষি প্রাপ্তরা চাষাবাদ করতে পারবে। তবে ঘর তোলা কিংবা আবাসিক প্লট হিসাবে বিক্রি-বরাদ্ধের কোন সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য