চোখের ওপর মোটা কাপড়ের পর্দা দেওয়া কলুর বলদ চলছে। অন্যদিকে কাঠের তৈরী ঘানিটা ঘুরছে, আর সরিষা পিষে ধীরে ধীরে মাটির পাত্রে পড়ছে তেল। এভাবেই তৈরি হয় খাঁটি সরিষার তেল। এর ঝাঁঝালো গন্ধে চোখে পানি এসে যায়।
কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল এক সময় হাটবাজারে বিক্রি হতো। এ তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন কলু সম্প্রদায়। তবে এক সময়ের গ্রামবাংলার এই অতি পরিচিত দৃশ্যটি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। বৈদ্যুতিক যন্ত্রেই করা হয় তেল ভাঙানোর কাজ। ভাঙানোর খরচ সাশ্রয় ও সময় কমের কারণে মেশিনে সরিষা ভাঙাতে মানুষের ঝোঁক বেশি। তবে দু-একটি ঘানি এখনো রয়েছে সাভার নামাবাজারে বংশী নদীর পাড়ে।
বাপদাদার এ পেশা ধরে আছেন আশরাফ বেপারী (৬৫)। বহু বছর ধরে বলদ দিয়ে ঘানিভাঙা সরিষার তেল বিক্রি করে চলছে আশরাফের সংসার।
সাভার নামাবাজার গেলে চোখে পড়ে কলু ঘরটি। সময় তখন দুপুর ১২টা। চৌকিরওপর বসে আছে আশরাফ বেপারী। মুখে তার সোনালি পাকা দাড়ি। ঘানিঘরে সরিষা মাড়াই করা হচ্ছে। দুইটি গরুর চোখ বেঁধে ঘানির জোয়াল কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। গরু দুটি ঘুরছে আর ঘানির নলি বেয়ে তেল পড়ছে একটি পাত্রে। সম্পূর্ণ খাঁটি সরিষার তেল।
আশরাফ জানান, ১৬টি গরু দিয়ে তিনি প্রতিদিন ১৬০ কেজি সরিষার তেল তৈরি করেন। পাঁচ কেজি সরিষায় দেড় কেজি তেল হয় বলে জানান আশরাফ। প্রতি কেজি সরিষার তেল ২৮০ টাকায় সে হিসাবে পাঁচ কেজি সরিষার তেল ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করে তার লাভ হয় মাত্র ২০০ টাকা। এ দিয়েই চলে আশরাফের সংসার।
গরুর চোখ বাঁধা থাকে কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘোরার সময় চোখ খোলা থাকলে ঝাঁজ লাগে বিধায় আর ঘুরতে চায় না। এ কারণে চোখ বেঁধে দিতে হয়।
আশরাফ আরো জানান, এ পেশার সাথে যুক্ত আছেন মাত্র দুজন। এর একমাত্র কারণ একটি ঘানি স্থায়ী হয় ১ বছর। আর একটি ঘানি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। এছাড়া ঘানি টানার কাজে যে গরু লাগানো হয় বর্তমান বাজার হিসেবে তার প্রতিটির দাম প্রায় লাখ টাকা। শক্তিধর গরু না হলে ঘানি টানতে পারে না। ঘানি টানা, গরুর জন্য একটি কঠিন কাজ। ফলে ধীরে ধীরে সবাই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য