কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁ। ধান-চাল, শাক-সবজির পাশাপাশি আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত সীমান্তবর্তী এই জেলায় ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের পর থেকেই আমের গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। দেশের সুনাম কুড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে এই জেলার আম। আর এই আমের রাজধানী খ্যাত জেলায় প্রতিটি বাগানে মুকুল আসার পর থেকে বাগানকে ঘিরে বেড়েছে কৃষকদের ব্যস্ততা।
তবে কৃষকরা বলছে আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কিছুটা দেরিতে গাছে মুকুল আসলেও সময়ের ব্যবধানে তা আরও বাড়বে বলে আসা করছে স্থানীয় কৃষকরা।
দিনে তাপদাহ এবং রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে আমের মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। এই প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য বাগানে বাগানে নিয়মিত চলছে নানা রকম পরিচর্যা ও নিয়মিত সেচ ব্যবস্থা। কৃষকরা বলছে এই আবহাওয়ার কারণে তাদের বাড়তি পরিশ্রম ও টাকা গুনতে হচ্ছে। আমের মুকুল রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। এই আবহাওয়া ঠিক না হলে আমাদের বিলম্ব না পড়তে হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলায় আম এর আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এই মৌসুমে আম এর সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। প্রতি হেক্টরে ১২.৫০ মেট্রিকটন। উপজেলা ভিত্তিক আমের রয়েছে, সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, রানীনগর, ১৩০ হেক্টর, আত্রাই ১২৫ হেক্টর, বদলগাছী ৫৩০ হেক্টর, মহাদেবপুর ৭২০ হেক্টর, পত্নীতলা ৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর, ধামইরহাট ৬৯৫ হেক্টর, মান্দা ৪২০ হেক্টর, পোরশা ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর, সাপাহার ৯ হাজার ২৭০ হেক্টর, নিয়ামতপুর এক হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করা হয় বলে জানায় কৃষি অফিস।
আমের বাগান গুলোতে মুকুলের দেখা কিছুটা ধীরগতিতে আসলেও চলতি মৌসুমে আমচাষী এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর একারণেই আশায় বুক বেঁধে আমচাষীরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা চলতি মৌসুমে তারা বিগত বছরগুলোর তুলনায় আম থেকে অর্থনৈতিক ভাবে অনেক লাভবান হবেন।
জেলার সাপাহার উপজেলার গোয়ালিয়া ইউনিয়নের আম চাষি মাসুদ বলেন, আমার আমের বাগান আছে ৩০ বিঘা জমিতে। বাগানে রয়েছে আম্রপালি, নেংড়া, হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪, বারি-৫, বারি-২, জাতের আছে। এবার বাগানের গাছগুলোতে একটু দেরি করে মুকুল দেখা মিলেছে। এখন পর্যন্ত আমার বাগানে প্রায় ৬০শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। একটু দেরিতে হলেও আমার বাগানের সব গাছেই মুকুল আসবে আশা করছি। এখন আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ আম গাছে পরিচর্যায় ব্যস্ততা বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।
ওই উপজেলার আর এক আম চাষী রেজুওয়ান বলেন, আমের গাছ পাছে মুকুল আসার পরে থেকেই কৃষক শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। গত বছর থেকে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক বিঘা জমিতে আমাদের আম উৎপাদন করতে সেচ, সার, ছত্রাক নাশক, কীটনাশক এবং শ্রমিকসহ সকল ধরনের পরিচর্যা, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ করতে আমাদের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যায় করতে হয়।
আর একবিঘা জমি লিজ নিয়ে করলে আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জমির জন্য খরচ করতে হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ পরিমাণ জমি থেকে ৮০ থেকে ১ লাখ ২০হাজার টাকার বিক্রয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় আমের আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ আম বাগানে মুকুল এসেছে। মুকুল আসার আগে-পরে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন এ বছর তা বিরাজ করছে। আমরা ধারণা করছি জেলায় যে পরিমাণ জমিতে আমের চাষ হয়েছে তা থেকে ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর প্রায় ২২০ মেট্রিক টন আম এই জেলা থেকে বহির বিশ্বে রপ্তানি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমেও আমরা উত্তম কৃষি পরিচর্যার মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানির জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ সহকারে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা ধারণা করছি এ বছর প্রায় ৫০০ মেটিক টনের মত আম বিদেশে রপ্তানি হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য