-->
শিরোনাম

মাসিদুলের নেতৃত্বে নতুন সিন্ডিকেট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
মাসিদুলের নেতৃত্বে নতুন সিন্ডিকেট
ক্যাপশন: বামে ম্যানেজার ইসলাম হোসেন, ডানে মাসিদুল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গ্রাহকের শত কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি সংস্থা মধুমতি এনজিও’র বিরুদ্ধে। জানা গেছে, গ্রাহকের শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের ৮ সদস্য বর্তমানে কারাগারে।

 

বাকিরা রয়েছেন আত্মগোপনে। মধুমতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত মাসুদ রানা এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। এ সুযোগে টাকা আত্মসাতে নতুন গড়ে উঠেছে নতুন সিন্ডিকেট। নয়ছয় হচ্ছে গ্রাহকের টাকা।

 

অভিযোগ রয়েছে, মধুমতির গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বটতলা হাট এলাকার মাসিদুল ইসলাম। যিনি নিজেকে একেক সময় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দেন।

 

জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট শিবনারায়ণপুরের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা। তিনি মধুমতির মাসুদ নামে বেশি পরিচিত। গত ২০১৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে এনজিও’র নিবন্ধন নেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৬টি শাখা খুলে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। পরে এনজিও’র টাকায় ২৩টি ট্রাক, প্রিন্টিং প্রেস, গরু-গাড়ল খামার, লবণ, মসলা ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত শুরু করেন। নাম দেয়া হয় মধুমতি গ্রুপ।

 

২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা। অনুসন্ধান বলছে, মাসুদ রানা অস্ত্র-গুলিসহ আটকের পর একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মধুমতির আর্থিক কেলেঙ্কারিকে পুঁজি করে গ্রাহকদের ডেকে এনে আদালতে প্রায় ৩শ’ মামলা করেছে চক্রটি। যারা মধুমতি এনজিও’র আর্থিক লেনদেনে জড়িত নয় এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে। অথচ মধুমতি এনজিওর শাখার ম্যানেজার ও প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার ইসলাম হোসেন, এরিয়া প্রধান তানভীর আলীকে আসামি করা হয়নি। তারা গ্রাহকের টাকা আত্মসাতে সরাসরি জড়িত।

 

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রাহকের ৭০ কোটি আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি। তবে এর বিপরীতে ঋণ দেয়া আছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। যে টাকা এখন এনজিও’র শাখা ম্যানেজারদের নিয়ন্ত্রণে। ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে গড়ে উঠা মামলাবাজ সিন্ডিকেটের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। মধুমতির প্রতারণায় ভূক্তভোগি পরিবার নামে সোস্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রুপও খুলেছে ওই সিন্ডিকেট।

 

সম্প্রতি কারাগার থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদনে মধুমতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা উল্লেখ করেন, জনগণের কাছ থেকে তিনি আমানত সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৭০ কোটি টাকা এর বিপরীতে ঋণ দিয়েছেন ৪৮ কোটি টাকার বেশি। ১৫-২০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে মধুমতির নামে। তিনি জেল থেকে বের হয়ে কয়েক মাস সুযোগ পেলে গ্রাহকদের আমানতের সব টাকা পরিশোধ করা সম্ভব।

 

আবেদনে আরও বলেন, তিনি কারাগারে থাকার সুযোগে মধুমতির টাকা আত্মসাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বটতলা হাট এলাকার মাসিদুল ইসলাম এ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। শাখা ম্যানেজারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সবার কাছে ফাঁকা চেক ও নগদ টাকা নিয়েছেন। এরা প্রতিদিনই মাঠ পর্যায় থেকে টাকা সংগ্রহ করছেন আর আত্মসাত করছেন।

 

মধুমতির জেনারেল ম্যানেজার ইসলাম হোসেন, এরিয়া ম্যানেজার তানভীর আলী এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে থাকা মধুমতির বিপুল পরিমাণ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। জনগণের টাকা আত্মসাতে জন্য তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে কৌশলে আটকে রাখা হচ্ছে। তিনি কারাগারে বন্দি থাকলে মধুমতির ৪৮ কোটি টাকা নয়ছয় হবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে গ্রাহকরা।

 

এ বিষয়ে মাসিদুল ইসলামের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে একাধিক ফোন নম্বর থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে মধুমতির জেনারেল ম্যানেজার ইসলাম হোসেন তার নামে গ্রাহকের টাকায় কেনা ৮ কাঠা জমি থাকার কথা স্বীকার করেছেন। টাকা আত্মসাত ও মধুমতির আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার নামে কোন মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version