-->

বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ডান তীর প্রকল্প

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ডান তীর প্রকল্প
ক্যাপশন: ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বছরের পর বছর ধরে চলছে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র এই বালু ব্যবসা চালিয়ে এলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বলগেট, ড্রেজার কিংবা ট্রাক্টরের মাধ্যমে অবাধে নদ থেকে বালু তুলে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের (ব্লক পিচিং) ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।

 

চিলমারী উপজেলায় বালুমহাল না থাকলেও প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অন্তত ১২টি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এসব পয়েন্ট ব্রহ্মপুত্র নদের পারেই গড়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিবছর শত শত পরিবার তাদের ভিটামাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

 

একটি সূত্র জানায়, উপজেলার রাণীগঞ্জ, থানাহাট, চিলমারী, নয়ারহাট, রমনা ও অষ্টমীর চর ইউনিয়নে পাঁচ বছরে চার হাজার ৪০০ বসতভিটা নদের পেটে চলে গেছে। বাস্তুহারা হয়েছে এসব এলাকার মানুষজন।

 

এদিকে ভাঙন রোধে সরকার কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক পিচিং তৈরি করলেও অবাধে বালুভর্তি ট্রাক যাতায়াতের কারণে সেটিতে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ বাজার, রমনা নৌবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক বসতঘর। কিন্তু কিছুতেই বালু উত্তোলন থামাতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।

 

সম্প্রতি রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ তেলিপাড়া থেকে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকা ঘুরে ছোট-বড় ১২টি অবৈধ বালু পয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আবার আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বালু উত্তোলন কেন্দ্র করে রমনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে তম্রু মুকুলকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় হামলার শিকার মুকুল রমনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর-ই-এলাহী তুহিনকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে মামলা করেন।

 

স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা গেছে, রমনা ইউনিয়নের তেলিপাড়া এলাকায় কয়েক বছর ধরে অবৈধ বালুর ব্যবসা করে আসছেন সাইদুল, আশরাফুল ও বিজু। সাইদুল ও বিজু ওই ওয়ার্ডের যুবলীগ সদস্য। জোড়গাছ বাজার মাঝিপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের জেগে ওঠা চর কেটে বালু বিক্রি করে আসছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে তম্রু মুকুল ও সহসভাপতি ফারুক। পাশে ছাত্রলীগ নেতা রয়েলের নেতৃত্বে চর কেটে মাটি বিক্রি করে আসছিল একটি গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

 

এ ছাড়া চিলমারী নৌবন্দর এলাকায় চারটি অবৈধ বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এসব পয়েন্ট পরিচালনা করে উপজেলা স্বেচ্ছাসবক লীগের সদস্য জাকারিয়া, বিশাল, স্থানীয় ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামানসহ ১২ থেকে ১৫ জনের একটি গ্রুপ।

 

উত্তর রমনা এলাকায় দুটি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। আট মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের বালু বিক্রি করে আসছেন আলম, লেলিন, রাশেদ, নিলুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। ফকিরের হাট ঘাট এলাকায় আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বালুর পয়েন্ট পরিচালনা করে আসছেন। তিনি রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য।

 

রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকোল এলাকায় দুটি বালুর পয়েন্ট চালিয়ে আসছেন চিলমারী ইউএনও অফিসের চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বেলাল হোসেন। তবে এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী বেলালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

 

উপজেলা স্বেচ্ছাসবক লীগের সদস্য জাকারিয়া বলেন, ‘আমরা তো বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করতে চাই। বালুমহালের জন্য আবেদন করা হয়েছে।’ ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, ‘আমার ভাই-ভাতিজারা এ ব্যবসা করেছেন। তবে আমরা বালুমহালের জন্য আবেদন করেছি।’

 

জোড়গাছ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে তম্রু মুকুল বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দলীয় ছেলেপেলে বসে না থেকে বালু তুলছে। এখানকার সব জমি আমাদের নিজের। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে চা পানের খরচ জোটে।’

 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’ চিলমারীর ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড চিঠি দিয়েছে। তবে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

 

ভোরের আকাশ/মি

 

মন্তব্য

Beta version