-->
শিরোনাম

‘পানামা’ রোগে মরছে শতাধিক বিঘার কলা গাছ

পাবনা প্রতিনিধি
‘পানামা’ রোগে মরছে শতাধিক বিঘার কলা গাছ
ক্যাপশন: পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে শত শত বিঘার কলা খেতে মড়ক লেগেছে

পাবনার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে বেশিরভাগ জমি একসময় অনাবাদি থাকলেও কলাচাষ বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। গত কয়েক বছর ধরেই দুই উপজেলার চরাঞ্চলে কলার আবাদ কৃষকদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। তবে প্রকৃতি এবার বাদ সেধেছে। চরের জমিতে এখন হেলে পরা মৃত ও বিবর্ণ কলা গাছ চাষিদের স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে। এক-দুই বিঘা নয়, বিস্তীর্ণ চরের শত শত বিঘার কলা খেতে মড়কের কারণে এ বছর কলার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কলা গাছে ছত্রাক-বাহিত পানামা রোগের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পানামা রোগের ছত্রাক জন্ম নেওয়ায় কলা গাছের নিম্নাংশে পানি প্রবাহের শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কলাগাছে পানি প্রবাহে বিঘ্ন হয়। এতে গাছ শুকিয়ে হেলে পড়ে। আক্রান্ত কলাগাছে কোনো ফলন হয় না বলে জানান তিনি।

 

উপ-পরিচালক আরও বলেন, পানামা সংক্রামক রোগ। কলাগাছে পানামার আক্রমণ হলে, দ্রুত আক্রান্ত গাছ কেটে পুতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু পাবনা ও ঈশ্বরদীর কলাচাষিরা অসুস্থ কলাগাছ জমির পাশেই জড়ো করে রাখছেন। ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্য গাছেও। এভাবে পানামার সংক্রমণ মহামারি আকার নিয়েছে বলে জানান তিনি।

 

পদ্মা তীরবর্তী পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ডিক্রির চর ঘুরে দেখা গেছে, বিঘার পর বিঘা কলার বাগান রোগাক্রান্ত গাছে ছয়লাপ হয়ে পড়েছে। এতে কলার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কলা চাষি সেলিম মোল্লা জানান, তিনি চরের প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। বাগানের পুরোনো গাছের বেশিরভাগেই মড়ক লেগেছে। প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি কলাগাছের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে।

 

পাবনা সদর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কলাচাষি মো. ওয়াজেদ মিয়া বলেন, প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। কয়েকটি জায়গায় পুরোনো কলাগাছে মড়ক শুরু হয়েছে। অনেক ওষুধ দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। এ অবস্থা শুধু তার বাগানেই নয়, বিস্তীর্ণ চরের বেশিরভাগ কলা চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি। পানামার আক্রমণে পাবনায় কলা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কলা চাষিরা। কলার দাম বেড়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা।

 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাবনায় তিন হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। ঈশ্বরদীতে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টরের বেশি জমিতে। এ বছর পাবনায় কলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৪৩ লাখ মেট্রিক টন। মহামারির প্রভাবে পাবনার কলার উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা আছে। রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে না এলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।

 

ঈশ্বরদীর কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় নিয়ম না মেনে কলা আবাদ করায় পানামা রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। কলার জমিতে পর পর তিনবার কলা চাষের পর একবার অন্য ফসল আবাদ করা হলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। কৃষকরা একই গাছ থেকে তিন বার কলা উৎপাদন করেন। একই জমিতে আবারও কলা রোপণ করেন। বিরতিহীনভাবে কলা আবাদ করায় জমিতে ছত্রাকের জন্ম হচ্ছে।

 

এ বছর পানামা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকরা সচেতনভাবে অসুস্থ গাছ ধ্বংস করে দিলে সংক্রমণ কমতে পারে। ভবিষ্যতে কলার জমিতে এ ধরনের সংক্রামক প্রতিরোধের জন্য নিয়ম মাফিক তিন বছর পর অন্য ফসল আবাদের পরামর্শ দেন কৃষিবিদরা।

 

এদিকে, পানামার আক্রমণে কলার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ইতোমধ্যে কলার দাম বেড়েছে। পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডের কলা ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই পাইকারি বাজারে কলার দাম বাড়ছে। ১ সপ্তাহ আগেও ১০০ কলা পাইকারি বাজার থেকে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় কেনা যেত। এ সপ্তাহে একই সংখ্যক কলার দাম পাইকারি বাজারে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।

 

পাইকারি বাজারে প্রতি হাজার কলার দাম ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে ১ হালি কলার দাম কমপক্ষে ১০ টাকা বেড়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। রোজার সময় এমনিতেই কলার চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কম হলে কলার দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version